afghanistan-cricket-team20160921114316

স্পোর্টস ডেস্কঃ দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে সফরকারী আফগানিস্তান ২ উইকেটে পরাজিত করল বাংলাদেশকে। এ জয়ের ফলে তিন ম্যাচের সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে সমতা ফিরিয়ে আনলো সফরকারীরা।
মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ অনুষ্ঠিত দিবা রাত্রির ম্যাচে টসের বিপরীতে ব্যাটিং পেয়ে ৪৯.২ ওভারে সবকটি উইকেটের বিনিময়ে ২০৮ রান করতে সক্ষম হয় টাইগাররা। অপরাজিত থেকে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন অভিষেক পাওয়া ২০ বছর বয়সি মিডল ওভার ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন মুশফিকুর রহিম। আফগানিস্তানের হয়ে ৩ উইকেট নেন রাশিদ খান। ২টি করে উইকেট সংগ্রহ করেন মোহাম্মদ নবী ও মিরওয়াইস হোসেন।
জবাবে ২১২ রান সংগ্রহ করে জয় নিশ্চিত করে আফগানিস্তান। সফরকারী দলের পক্ষে আসগর স্তানিকজাই ৫৭, মোহাম্মদ নবী ৪৯ ও মোহাম্মদ শেহজাদ ৩৫ রান সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব আল হাসান নেন ৪ উইকেট। ব্যাটিং ঝলক দেখানোর পর ২টি উইকেট সংগ্রহ করেন স্বাগতিক দলের অভিষিক্ত ক্রিকেটার মোসাদ্দেক।
ব্যাটিং নিয়ে শুরুটা ভালই করেছিলেন স্বাগতিক দলের দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। বিনা উইকেটে ৪৫ রানের ওপেনিং পার্টনারশীপ দাঁড় করলেও আকস্মিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে স্বাগতিক দল। একাদশ ওভারে মিরওয়াইসের শিকার হয়ে ২০ রান সংগ্রহকারী তামিম ইকবালের উইকেটটির পতনের পরপরই অর্ধশত রানের দলীয় সংগ্রহের কোটায় পৌছার পর বিদায় নেন সমান সংখ্যক রান সংগ্রহকারী সৌম্য সরকারও। তিনিও মিরওয়াইসের শিকারে পরিণত হন দলীয় ত্রয়োদশ ওভারে।
এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম জুটিবদ্ধ হয়ে স্বাগতিক ইনিংসটি মেরামতের চেস্টা চালিয়ে গেলেও পুরোপুরি সফল হননি। ব্যক্তিগত ২৫ রানে নবীন উল হকের বলে বোল্ড আউট হয়ে সাজ ঘরে ফিরেন রিয়াদ। আর মুশফিকুর রহিম ৩৮ রানের সংগ্রহ নিয়ে যখন নবীনের শিকার হয়ে রিয়াদের পথ ধরেন তখন টাইগার দলের সংগ্রহ মাত্র ১২২রান।
এরপর একচেটিয়া আধিপত্য চালিয়েছে আফগান বোলাররা। সাকিব আল হাসানের (১৭) গুরুত্বপুর্ন উইকেটটি মোহাম্মদ নবী তুলে নেয়ার পর একে একে সাব্বির রহমান, মাশরাফি বিন মোর্তাজা, তাইজুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদকে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন অনেকটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নেন আফগান বোলাররা। মাত্র ২৭ রানের মধ্যেই স্বাগতিক দলের এই ৫ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেয় সফরকারী দল। উইকেট পতনের মাঝেও একপাশ আগলে স্বাগতিক দলকে ভরসা দিয়েছেন অভিষেক পাওয়া মোসাদ্দেক। শেষ পর্যন্ত তার হার নামানা ৪৫ রানে ভর করে ২০০ রানের মালইস্টোন অতিক্রম করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ।
জবাবে আফগানিস্তানের ব্যাটিং সুচনায় ধ্বস নামান সাকিব আল হাসান। নিজের দ্বিতীয় এবং দলীয় চতুর্থ ওভারে পরপর দুটি উইকেট তুলে নেন বিশ্ব নন্দিত এই অল রাউন্ডার। তাইজুলের সহায়তায় তিনি ওপেনার নওরোজ মঙ্গলকে (১০) ফিরিয়ে দেয়ার পর এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে তিনি শুন্য রানে মাঠছাড়া করেন আফগান ব্যাটসম্যান রহমত শাহকে। মাত্র ১৪ রানে পরপর দুটি উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া আফগানদের এরপর টেনে নিয়ে যেতে থাকেন অপর ওপেনার মোহাম্মদ শেহজাদ ও হাসমতুল্লাহ শাহিদি।
এই জুটি ধীর স্থির ব্যাটিংয়ের সাহায্যে দলকে ৬৯ রানে পৌছে দেয়ার পর বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন ডেবুডেন্ট ক্রিকেটার মোসাদ্দেক। এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে হাসমতুল্লাহকে (১৪) ফিরিয়ে দেন তিনি। এর পরপরই সফরকারী শিবিরে ফের আঘাত হানেন সাকিব। তাইজুলের সহায়তা নিয়ে এবার তিনি ফিরিয়ে দেন বিপজ্জনক হয়ে ওঠা সফরকারী ওপেনার শেহজাদকে (৩৫)। এরপর আফগান ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন আসগর স্তানিকজাই ও মোহাম্মদ নবী। দীর্ঘ সময় ক্রিজে টিকে থেকে এই দুই ব্যাটসম্যান দলীয় ইনিংসকে নিয়ে যান জয়ের অনেকটাই কাছাকাছি। ৫ম উইকেট জুটিতে দলীয় সংগ্রহশালায় যোগ করেন ১০৭ রান। এরপর বল হাতে ফের এগিয়ে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি। এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে তিনি যখন নবীকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তখন আফগানিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭০ রান। আর হাফ সেঞ্চুরি করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে ধীরে ধীরে মাঠ ছাড়েন ৪৯ রান সংগ্রহকারী নবী। ইতোমধ্যে হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন আসগর। পরের ওভারে বল করতে এসে তাকে ২য় শিকার বানিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে অভিষেক ম্যাচকে আরো রাঙ্গিয়ে তোলেন মোসাদ্দেক। সাব্বির রহমানের সহায়তা নিয়ে ৫৭ রান সংগ্রহকারী আসগরকে ফিরিয়ে দেন তিনি। এরপর মাশরাফির ওভার ঘুরে নিজের শেষ ওভার করতে এগিয়ে আসেন সাকিব। চতুর্থ বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে তিনি যখন রাশিদ খানকে (৫) ফিরিয়ে দেন তখন জয় থেকে মাত্র ২০ রান দূরে অবস্থান করছিল আফগানিস্তান। এরপর সাকিব চতুর্থ ও তাসকিন আহমেদ একটি উকেট সংগ্রহ করলেও পরাজয় এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ২ বল হাতে রেখে ২১২ রান সংগ্রহের মাধ্যমে জয় নিশ্চিত করে আফগানিস্তান।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক দৌলত জাদরান ব মিরওয়াইস আশরাফ ২০
সৌম্য সরকার ক হাশমতুল্লাহ শাহিদি ব মিরওয়াইস আশরাফ ২০
মাহমুদুল্লাহ নবীন উল হক ২৫
মুশফিকুর রহমান ক নবীন উল হক ব রহমত শাহ ৩৮
সাকিব আল হাসান এলবিডব্লু ব নবী ১৭
সাব্বির রহমান এলবিডব্লু ব রশিদ খান ৪
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত অপরাজিত ৪৫
এাশরাফি বিন মর্তুজা ক দৌলত জাদরান ব মোহাম্মদ নবী ২
তাইজুল ইসলাম এলবিডব্লু ব রশিদ খান ১০
তাসকিন আহমেদ এলবিডব্লু ব রশিদ খান ০
রুবেল হোসেন রান আউট (নবীন উল হক) ১০
অতিরিক্ত:(বা-১, লেবা-৭, ও-৮, নেব-১) ১৭
মোট : (অল আউট; ৪৯.২ ওভার) রান- ২০৮

উইকেট পতন : ১-৪৫, ২-৫০, ৩-১১১, ৪-১২২, ৫-১৩৮,৬-১৩৮,৭-১৪১, ৮-১৬৫, ৯-১৬৫, ১০-২০৮
বোলিং :
মো: নবী ১০-৩-১৬-২,
দৌলত জাদরান ৮-১-৪৭-০৯ও-৪),
মিরওয়াইস জাদরান ৫-০-২৩-২
নভান উল হক ৮.২-০-৪৯-১(ও-১),
রশিদ খান ১০-২-৩৫-৩(ও-১),
রহমত শাহ রান ৮-০-৩০-১(নোব-১, ও-২)
আফগানিস্তান ইনিংস :
মোহাম্মদ শাহজাদ ক তাসকিন ব সাকিব ৩৫
নওরোজ মঙ্গল ক তাইজুল ব সাকিব ১০
রহমত শাহ এলবিডব্লু ব সাকিব ০
হাসমতউল্লাহ শাহিদি এলবিডব্লু ব মোসাদ্দেক ১৪
আসগর স্তানিকজাই ক সাব্বির ব মোসাদ্দেক ৫৭
মোহাম্মদ নবী এলবিডব্লু ব মাশরাফি ৪৯
নজিবুল্লাহ জাদরান ক মোসাদ্দেক ব তাসকিন ২২
রশিদ খান এলবিডব্লু ব সাকিব ৫
মিরওয়াইস আশরাফ অপরাজিত ৯
দৌলত জাদরান অপরাজিত ৪
অতিরিক্ত ( লেবা-২, ও-৫) ৭
মোট-(৮ উইকেট, ৪৯.৪ ওভার) রান- ২১২
উইকেট পতন : ১-১৪, ২-১৪, ৩-৫৯, ৪-৬৩, ৫-১৭০, ৬-১৭৪, ৭-১৮৯, ৮-২০৮।
বোলিং :
মাশরাফি বিন মর্তুজা ১০-০-৩১-১ (ও-১),
সাকিব আল হাসান ১০-০- ৪৭-৪,
তাসকিন ৪.৪-০-৩২-১(ও-২),
তাইজুল ১০-০-৩৮-০,
মোসাদ্দেক ১০-১-৩০-২(ও-১),
সাব্বির রহমান ২-০-৮-০,
রুবেল ৩-০-২৪-০।
ফল: আফগানিস্তান ২ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা।
ম্যাচ সেরা: মোহাম্মদ নবী আফগানিস্তান।

 

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে