barisal

বিডি নীয়ালা নিউজ(২২ই মার্চ১৬)-অনলাইন প্রতিবেদনঃ ব্যালট পেপার ও ব্যালট বক্স ছিনতাই,  হামলা,  সংঘর্ষ,  প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়িতে হামলা,  অগ্নিসংযোগ,  গুলি, কেন্দ্র দখল করে জাল ভোটের মহোৎসবের মধ্য দিয়ে বরিশাল জেলার ৭৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।

কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বিএনপি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী,  জাতীয় পার্টি,  ওয়ার্কার্স পার্টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সকাল ১০টার মধ্যে ভোট বর্জন করেছে।

এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে দেখিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে।

ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নে ভোটারদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালট রেখে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টায় বিপুল সংখ্যাক ভোটারের উপস্থিতিতে বরিশালের ৭৪ ইউনিয়নের ৬৭৭টি কেন্দ্রের ৩ হাজার ৮৯১টি কক্ষে একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। উৎসব মুখর পরিবেশে নবীন-প্রবীণসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে।

কিন্তু পরক্ষণেই পাল্টে যায় পরিস্থিতি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের কড়াপুর পপুলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হানা দেয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান খোকনের একদল কর্মী-সমর্থক।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বিএম কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে একদল দুষ্কৃতকারী আকস্মিক কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট এবং বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এ সময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত পোলিং অফিসারদের সাথে দুষ্কৃতকারীদের হাতাহাতি এবং ধস্তাধস্তি হয়। এতে বেশ কিছু ব্যালট এবং নির্বাচনী সরঞ্জামাদী নষ্ট হয়। এই সুযোগে দুষ্কৃতকারীরা ৩শ’ ব্যালট পেপার এবং একটি ভোট বক্স ছিনতাই করে। পুলিশ সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এই ঘটনা ঘটলেও তারা প্রথমে ছিল নির্বিকার। পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তবে ছিনতাই হওয়া ব্যালট কিংবা বাক্স উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

এ ঘটনার পর প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন। সকাল সোয়া ১১টার দিকে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্বাচনী সরঞ্জামসহ পুলিশের প্রহরায় কেন্দ্র ত্যাগ করেন।

একই ইউনিয়নের মঙ্গলহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ এবং ব্যালট ছিনতাই চেষ্টার কারণে সকাল ১১টায় ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসার মো. সাইদুর রহমান। এছাড়া ওই ইউনিয়নের বারুখায়ের দিঘিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং একই ইউনিয়নের কটুরাকাঠী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে এই দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত ছিল বলে জানিয়েছেন প্রিজাইডিং অফিসারদ্বয়।

সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার চন্দ্র মোহন ইউনিয়নের পশ্চিম ভেদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে ক্ষমতাসীদের জাল ভোট দিতে বাধা দেয়ায় ছাত্রদল নেতা আব্দুর কাদেরকে পিটিয়ে আহত করা হয়।  উজিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন সাতলা, হারতা, জল্লা, ওটরা, বরাকোটা, ষোলক ও বামরাইল ইউনিয়নের মধ্যে একমাত্র সাতলা বাদে সবগুলো ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে সংশ্লিষ্ট এজেন্টদের দেখিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সকাল সাড়ে ১০টায় উজিরপুরের হারতা ইউনিয়নের জামবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হরেন রায় মোটর সাইকেল মহড়া নিয়ে কেন্দ্রে দখল করে জাল ভোট দিতে থাকলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হয় এবং ভাংচুর করা হয় ব্যালট বাক্স।

উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা হরেন রায়ের ৫টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সাময়িক স্থগিত করেন প্রিজাইডিং অফিসার। একই ইউনিয়নের মধ্য কালভিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এক প্রার্থীর কর্মীরা ৩শ’ ব্যালট ছিনতাই করলে ওই কেন্দ্রে সকাল সোয়া ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। সকাল ১১টায় অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন করেন উজিরপুরের বামরাইল ইউনিয়নে বিএনপি’র প্রার্থী আব্দুল মতিন সরদার নান্টু।

অনিয়ম আর ভোট কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সকাল সাড়ে ১১টায় সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ভোট বর্জন করেন বলে জানিয়েছেন বরিশাল মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি একেএম মোর্তুজা আবেদীন।

হিজলার ৪টি এবং মেহেন্দিগঞ্জের ৮টি ইউনিয়নের সবগুলো কেন্দ্র থেকে বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে দিয়ে ক্ষমতাসীন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা একতরফা জাল ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবেক এমপি মেজবাউদ্দিন ফরহাদ। এছাড়া গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও মুলাদীর ১৮টি ইউনিয়নের সবগুলো কেন্দ্র দখল করে বিএনপি’র এজেন্টদের বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন জালভোটের মহোৎসব করেছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা (উত্তর) বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান।  একইভাবে বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের সবগুলো দখল করে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ করেছেন বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান। মঙ্গলবার দুপুরে বাকেরগঞ্জ পৌর শহরের নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।

বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নে ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন বাড়ি হামলা চালিয়ে ঘর ভাংচুর, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং ২ জনকে গুলিবিদ্ধ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। ভোটে অনিয়মের অভিযোগে পরক্ষণেই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী কামাল হোসেন।  একই উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের ময়দানের হাট কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের দুই সদস্য প্রার্থীর দুইদল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন আহত হয়।  প্রায় একই সময়ে হিজলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বদরপুর ফয়েজ স্মৃতি স্কুল কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দুই সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়।    নানা অনিয়ম আর কারচুপির অভিযোগে সকাল ১১টায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন আগৈলঝাড়ার বাকাল ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী লাবন্য আক্তার।  একই অভিযোগে সকাল সাড়ে ৯টায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে বিএনপি’র প্রার্থী মজিবর রহমান, উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজউদ্দিন সোহাগ মোল্লা। উজিরপুরের ষোলক ইউনিয়নে বিএনপি পার্থী মশিউর রহমান মনিরের বড় ভাই কবির হোসেনকে উত্তর ধামুরা এলাকায় মারধর করে ক্ষমতাসীনরা।  আগৈলঝাড়ার বাগধা ইউনিয়নে ক্ষমতাসীনদের ভোট কেন্দ্র দকল করে জাল ভোট দিতে বাধা দেয়ায় বিএনপি’র সঙ্গে তাদের (আওয়ামী লীগ) সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ৩টি ব্যালট পেপার বই ছিনতাই এবং ব্যালট বাক্স ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এই সংঘর্ষে অন্তত ৪০জন আহত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী মাহবুবুল ইসলাম জানিয়েছেন।  বাবুগঞ্জের চাঁদপাশা বোর্ড স্কুল এবং সদর উপজেলার কাশীপুর মগরপাড়া কেন্দ্রেও আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপি’র সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (দুপুর ১টা) বিভিন্ন স্থানে জাল ভোট প্রদান, ভোটগ্রহণ স্থগিত এবং সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে