nekles

বিডি নীয়ালা নিউজ(২৬ই মার্চ১৬)-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিবেদন: পেটে পড়েনি। সবে কামড় দিয়েছেন বা চিবোচ্ছেন। বা গলায় রয়েছে।

সেই অবস্থাতেই জেনে নিতে চান, একটা আপেল কামড়িয়ে কতটা ক্যালোরি নিলেন আপনার শরীরে?

যদি বেশি ক্যালোরি নিয়ে ফেলেন, তা হলে আর তখনই প্লেটে রাখা গাজরটা তুলে কামড়াবেন না, তাই তো?

সব সময় ক্যালোরি মেপে-টেপে যাঁদের খেতে হয়, সেই ডায়াবেটিস, ওবেসিটি বা বদহজমের রোগীদের তো এমন ‘খবর’ পাওয়াটা খুবই জরুরি। সে ভাবেই খাওয়াদাওয়া করতে পারবেন। কী খাব, কোনটা কোনটা খাব আর তা কতটা খাব, এত সব জানার জন্য আর বার বার ডাক্তারের দরজায় ছোটাছুটি করতে হবে না।

জানার জন্য গলায় শুধু একটা ‘নেকলেস’ বাঁধতে হবে। যা সব সময়- হাঁটা-চলা, ঘোরাফেরার সময় আমাকে আপনাকে গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অফিসে টিফিন বা বাড়িতে ভাত খাওয়ার সময়। শেষ দুপুরে ফল খাওয়ার সময়। লাঞ্চ বা ডিনারের পর দই খাওয়ার সময়।

সদ্য উদ্ভাবিত ওই ‘নেকলেস’টির নাম- ‘অটো-ডায়েট্রি’। যেটি বানিয়েছেন চিনের বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞানী ওয়েনইয়াও শু’র নেতৃত্বে একটি গবেষকদল। তাঁদের এই নতুন উদ্ভাবনের খবরটি বেরিয়েছে ‘আইইইই-সেন্সর্স’ জার্নালে।

‘অটো-ডায়েট্রি: আ ওয়্যারেব্‌ল অ্যাকাউস্টিক সেন্সর সিস্টেম ফর ফুড ইনটেক রেকগনিশান ইন ডেলি লাইফ’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে লেখা হয়েছে, আপেল, গাজর আর জামরুল যে শুধুই স্বাদে একে অন্যের চেয়ে আলাদা, তা-ই নয়। তাদের দাঁতে কাটার শব্দটাও আলাদা আলাদা। তার মানে, আপেল দাঁতে কাটলে যে শব্দটা হয়, গাজর কামড়ালে সেই শব্দটা হয় না। পেয়ারা কামড়ানোর শব্দটা আবার একেবারেই অন্য রকম। আবার জামরুল কামড়ানোর শব্দটা বাকি ফলগুলোর মতো নয়। ওই আলাদা আলাদা শব্দ চিনে বা তাদের কম্পাঙ্ক মেপেই এ বার আমার আপনার গলায় ঝোলানো ‘নেকলেস’ সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেবে, কত ক্যালোরির খাবার দাঁতে কেটেছি বা চিবিয়েছি। অথবা গলায় নিয়েছি।

বিভিন্ন পানীয়, ফল, হরেক রকমের খাবার খেলে বা কামড়ালে-চিবোলে কেমন কেমন শব্দ হয়, তা নিয়ে তাঁর গবেষণাগারে একটি ‘লাইব্রেরি’ বানিয়েছেন শু। সেখানে প্রতিটি ফল, খাবারদাবার আর পানীয়ের হরেক কিসিমের শব্দ নিয়ে সেই ‘লাইব্রেরি’তে একটি ‘ক্যাটালগ’ বানিয়েছেন গবেষকরা।

 

কী ভাবে কাজ করবে ওই নেকলেসটি? শু’র সহযোগী গবেষক, বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক নৈঋত মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এগুলোকে বলা হয় ‘ওয়্যারেব্‌ল ডিভাইজ’। ‘অটো-ডায়েট্রি’র মতো চরিত্রের ‘ওয়্যারেব্‌ল ডিভাইজ’ আরও আছে। যেমন- ‘ফিটবিট’।  কিন্তু সেগুলো পেটে (পড়ুন, পাকস্থলী) যাওয়ার পর যে পরিপাক হয়, তা থেকে তৈরি হয় প্রচুর তাপশক্তির। সেই তাপশক্তি মাপার ইউনিটই হল ক্যালোরি। সেই তাপশক্তি বিভিন্ন রকমের শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের কাজ করিয়ে নেয়। নানা রকমের রাসায়নিক বিক্রিয়া করিয়ে নেয়। ডায়াবেটিসের মতো রোগের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা রোগীদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালোরির খাবার খেতে বলেন। বাজারে চালু ‘ওয়্যারেব্‌ল ডিভাইজ’গুলো শুধু সেই পাকস্থলীতে পৌঁছনো খাবার থেকে তৈরি হওয়া ক্যালোরির পরিমাণই মাপতে পারে। কিন্তু, তার আগে সেই ফল বা খাবার যখন আমি আপনি দাঁতে কাটছি, চিবোচ্ছি, বা তা সবে গলায় পৌঁছেছে, তখন কিন্তু কতটা ক্যালোরি আমাদের শরীরে ঢুকল, তা জানতে পারি না। ‘অটো-ডায়েট্রি’ সেই কাজটাই করবে। আর সেই কাজটা সে করবে আপেল, পেয়ারা, জামরুল, গাজরের মতো বিভিন্ন ফল আর খাবার দাঁতে কাটার হরেক রকমের শব্দের বাছ-বিচার করে। তাই ‘অটো-ডায়েট্রি’ পাকস্থলীতে নয়, কোনও খাবার থেকে কতটা ক্যালোরি আমাদের শরীরে ঢুকল, তা গলাতেই মাপতে পারবে। সে খাবার হজম হওয়ার আগেই। এখনও পর্যন্ত এই ধরনের যন্ত্র কেউ বানাননি।’’

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে