River
বিডি নীয়ালা নিউজ(২৬ই ফেব্রুয়ারি১৬)-আসাদুজ্জামান সুজন (নীলফামারী প্রতিনিধি):   নীলফামারী জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বহমান নদীগুলোর আজ বেহাল দশা। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি এক সময় নদী ছিল। পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এখনও যেটুকু নদীর চিহ্ন আছে তা অনেকেই দখল করে নিয়েছে। এর দুই ধার দখল করে গড়ে তুলেছে বিভিন্ন অবকাঠামো। দেখার কেউ নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম জানতেই পারবে না এখানে একটি নদী ছিল। যা থেকে যাবে শুধু ইতিহাসে।

দিনের পর দিন পলি জমি ভরাট হওয়া নীলফামারীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদীগুলো আজ হারিয়েছে নাব্যতা। বর্ষায় দু’কুল ছাপিয়ে প্রবাহিত হলেও এই ২২টি নদ-নদী শুকনো মৌসুমে পরিণত হয়েছে আবাদি জমিতে। ক্ষীণ ধারায় বয়ে যাওয়া নদীগুলোর দুই ধারে এখন আবাদ হচ্ছে বোরো ধান, গম, তামাক, আলু, পিঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন সবজি। কৃষকের নিবির পরিচর্যা আর পরিমিত সার প্রয়োগে লকলক করে বেড়ে উঠা সবুজ সতেজ বোরো চারা দোল খাচ্ছে বাতাসে। এবারেও ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা বেজায় খুশি।

River-2

নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস জানিয়েছে, নীলফামারীর ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা, চাড়ালকাটা, বুড়িতিস্তা, বুড়িখোড়া, ধুম, কুমলাই, নাউতারা, যমুনেশ্বরী, নলডাঙ্গা, ইছামতী, খরখরিয়া, বুলাই, দেওনাই, শালকী, চিকলীসহ ছোটবড় ২২টি নদ-নদী। যার দৈর্ঘ প্রায় পাঁচশ কিলোমিটার। অর্ধ শতাব্দী আগেও এসব নদীর বুকে চলাচল করতো মালবোঝাই বড় বড় পাল তোলা নৌকা। স্থানভেদে সমতল ভূমি থেকে এসব নদীর গভীরতা এখন মাত্র তিন থেকে চার ফুট।

সমতল ভূমি থেকে এসব নদীর গভীরতা এখন স্থানভেদে মাত্র তিন থেকে পাঁচ ফুট। এক সময় নদীগুলোতে প্রচুর মাছ পাওয়া গেলেও এখন মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। পানিশূন্য নদীর বুকে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে শুকনো মৌসুমে আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন ফসল। নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় টানা বর্ষণের সময় দু’কুল ছাপিয়ে নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জমির ফসল। পানিতে তলিয়ে যায় মানুষের ঘরবাড়ি।

নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা এলাকার চাড়ালকাটা নদী তীরবর্তী এলাকার জমসেদ আলী, জাকারিয়া, ফয়জুল হভে  বলেন, এই নদীগুলোতে এক সময় বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। বাজার থেকে মাছ কিনতে হতো না। এক ঘণ্টা জাল ফেললে চার/পাঁচ কেজি মাছ পাওয়া যেতো। মাছগুলোর স্বাদ ছিল অন্যরকম। এখন সারাদিন জাল টানলেও এক কেজি মাছও পাওয়া যায় না। পলি ভরে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদী থেকে হারিয়ে গেছে মাছ। এসব নদী খনন করা না হলে আগামীতে নদীর আর অস্তিত্বই থাকবে না।

River3

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারী ডিভিশনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ভূ-গর্ভ পানির স্তর ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীর বিকল্প নেই। নীলফামারী জেলা ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ২২টি ছোট-বড় নদী পলি জমে আজ প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। নদীর বুকে আবাদ করছে এলাকার মানুষ বিভিন্ন ফসল। হারিয়ে গেছে মাছ।নদীগুলো পলি অপসারনের ব্যবস্থা করা না হয়ে এক সময় সবগুলো নদীই ভরাট হয়ে যাবে। এতে পরিবেশের চরম বিপর্যয় ঘটবে।

নব যৌবনে নদীগুলোকে ফিরিয়ে আনতে খননসহ বে-আইনি দখলদারিত্বের অবসান ঘাটানোর কোন বিকল্প নেই। খুব স্বল্প সময়ে নদীগুলোকে বাঁচানো না গেলে একদিকে যেমন হারিয়ে যাবে নদী, তেমনি আগামী প্রজন্ম হারাবে নদীকেন্দ্রিক নীলফামারীর ইতিহাস, এমন অভিমত সাধারণ মানুষের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে