এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
আশা…সেই অদ্ভুত আবেগ যা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে আগামীকালের অপেক্ষায়। মানুষ তার ভবিষ্যতের জন্য আশা করে, স্বপ্ন দেখে বলেই নিজের মাঝে সাহস খুঁজে পায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য।আবার এই আশার উল্টা পিঠেই রয়েছে হতাশা নামক এক মহামারী ভাইরাস।আর এই ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে হারিয়ে যেতে পারে অতল অন্ধকারে।
জীবন নামক এই মহাযুদ্ধে কেউ হচ্ছেন বিজয়ী,আবার কেউ পরাজিত।পরাজিত অনেকেই ডুবে যাচ্ছেন হতাশার সাগরে।ভালবাসা হারানো,পরীক্ষায় খারাপ ফল,কর্মজীবনে ব্যর্থতা,পরিবারে অশান্তি,নিজেকে নিয়ে অতৃপ্ত,প্রিয়জনের মৃত্যু,আর্থিক অসচ্ছলতা প্রভৃতি শতেক কারন রয়েছে হতাশার। যে ব্যক্তি যত বেশি হতাশ হবে সে তত বেশি পিছিয়ে পড়বে।ডেল কার্ণেগী বলেছেন-‘ একজন হতাশাগ্রস্থ মানুষের চেয়ে একজন
সুখি মানুষ হাজার গুণ বেশি কর্মক্ষম’।তাই শত প্রতিকূলতার মাঝেও ঝেড়ে ফেলুন হতাশা,স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করুন,গুটিয়ে নয় চুটিয়ে বাঁচুন।
হতাশা দূর করার উপায়ঃ
১।নিজের মূল্য বুঝতে শিখুন: কোনও কারনে বা কারো কারনে নিজেকে ছোট ভাববেন না।আপনি সৃষ্টিকর্তার এক অনন্য সৃষ্টি।একবার ভেবে দেখুন তো! সৃষ্টিকর্তা আপনার মতো আর কাউকে সৃষ্টি করেছেন কিনা? না তো! আপনি ভিন্নভাবে চিন্তা করতে পারেন।আপনার চোখ,নাক,মুখ,হাসি সব কিছুই দেখেন কত্ত্ব আলাদা।একবার আয়নার সামনে হেসে দেখুনই না,আপনাকে হাসলে কত সুন্দর দেখায়! আপনাকে সৃষ্টি না করলে যে
পৃথিবীর একটি সৃষ্টি অসম্পূর্ণ থেকে যেতো।নিজেকে কখনো অন্য কারোর সাথে তুলনা করতে যাবেন না,বরং যেমন আছেন আপনি, নিজেকে তেমনই যথেষ্ট ভেবে নিন।
২।অনুপ্রেরণামূলক বই পড়ুন,ভিডিও দেখুন: বই আত্নার খোরাক।তাই যখনই হতাশা আসবে তখনই বই পড়ে আত্নাকে সমৃদ্ধ করুন।সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়ুন,দেখবেন তারা সবাই অক্লান্ত সংগ্রাম করে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছেন।ডেল কার্ণেগী, ডাঃ লুৎফার রহমানের রচনাবলী সহ হাজার ও বই আছে,যা আপনাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিবে।থাকুন বইয়ের সাথে,ভালোবাসুন বইকে।দেখতে পারেন ইউটিউব থেকে টেড টকস
সহ বিভিন্ন ধরনের মোটিভেশনাল ভিডিও, লেকচার।
৩।ভাবুন কিছু সময়: একবার ভেবে দেখেন তো।আপনার চেয়ে আরো অনেক কষ্ট ও অসহায়ভাবে অনেকেই দিন যাপন করছে।এই মানুষগুলোর কথা চিন্তা করলেই আপনার কষ্ট অনেক কমবে।জুতার জন্য যে মানুষের মন খারাপ,পা-হীন লোক দেখলে যেমন তার দুঃখ দূর হয়,ঠিক তেমনি পাঁচতলা নিজের বাড়ি করতে না পারার কষ্ট রাস্তায় ঝুপড়ি ঘরের বাসিন্দাদের দেখলে দূর হয়ে যায়।নিজের চেয়ে বড় ও ভালো অবস্থানে যারা আছে তাদের দেখে কষ্ট পাবেন না, চেষ্টা করুণ তাদের মতো হওয়ার।
৪।নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: দুশ্চিন্তা, হতাশা দূরে রাখতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। জানেন তো! অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।আপনার মস্তিষ্ক এবং হাত ব্যস্ত থাকে এমন কোনো কাজ করুন।যা ইচ্ছা হয় তাই করুন।তবে নিজের ও অন্যের ক্ষতি করে নয়।ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে দিয়ে পাগলু ড্যান্স দিতে পারেন,বই পড়তে পারেন,মুভি দেখতে পারেন,আপনার ভালোলাগা, শখের কোনো কাজ করতে পারেন।
৫।হতাশাবাদীদের থেকে দূরে আর আশাবাদীদের কাছে থাকুন: হতাশাবাদীদের থেকে দূরে থাকুন,অনেক দূরে। এদের সাথে কখনো সঙ্গ দিবেন না,সময় দিবেন না।এরা অবচেতনভাবে আপনাকে দিন দিন হতাশার সাগরে ডুবে মেরে ফেলবে।এদেরকে কখনো পাত্তা দিবেন না।তাই বলি কি! আশাবাদীদের সাথে মিশুন,তাহলে সুখি হবেন,জীবন সুন্দর হবে।হতাশা হাজার মাইল দূরে দৌড়ে পালিয়ে যাবে।
৬।খুঁজে নিন নতুন সূচনার সাহস: জীবনে যতই অন্ধকার আসুক,যতই প্রতিকূলতা আসুক না কেনো নতুন করে সূচনা করতেই হবে।কেননা নতুন সূচনা না করলে আপনার জীবনের দূরবস্থা কাটবে না কিছুতেই।মনের মাঝে যতই হতাশার অন্ধকার জমে থাকুক না কেনো,নিজের অতীতের সফলতাগুলো থেকে খুঁজে নিন নতুন করে শুরু করবার সূচনা।আর একবার যখন নতুন সূচনা হয়ে যাবে, দেখবেন মনের হতাশাও আস্তে আস্তে কমে যেতে শুরু করেছে।
৭।বিশ্বাস রাখুন মানবিক সম্পর্কে : নিজের মানবিক সম্পর্কগুলোর উপরে নির্ভর করতে শিখুন।পরিবার,বন্ধু-বান্ধব,আপনজনদের সাথে যে আবেগ ও সামাজিকতার বন্ধনে আপনি আবদ্ধ, সেটাবে কখনোই খাটো করে দেখবেন না।এমনকি যদি কোনও সম্পর্কের কারনেই আপনার বর্তমান এই হতাশা এসে থাকে,তবুও বিশ্বাস হারাবেন না,অন্য সম্পর্কগুলোর প্রতি।একটি সম্পর্ক কষ্ট দিয়েছে বলে সকল সম্পর্ক দিবে, এটা ভাবার
কোনও কারন নেই।
৮।বিশ্বাস রাখুন জীবনের উপর: লক্ষ্য করে দেখবেন,বিপদ দেখতে যত বড় আসলে ততটা হয়না।বেশিরভাগ সময়ই আমাদের অতি আশংকা বিপদকে বিশাল বানিয়ে ফেলে।হতাশার ক্ষেত্রে ও কিন্তু তাই।যত আপনি নিজেকে আর নিজের জীবনকে খারাপ আর কুৎসিত মনে করবেন,ততই বাড়তে থাকবে আপনার হতাশা।নিজেকে গালমন্দ করে বা আস্থা হারিয়ে আপনি কিছুই পাবেন না।বরং চেষ্টা করুন বিশ্বাসটা ধরে রাখতে।জীবনের সকল দুঃসময় কখনো না কখনো কাটিয়ে উঠে।আপনার ক্ষেত্রেও উঠবে।





