sheikh-hasina

ডেস্ক রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’।
তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির নির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য পূরণে ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অভিযাত্রা।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের কামরুল আশরাফ খানের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলার ও আইটি পেশাজীবীদের সংখ্যা ২০ লাখে উন্নীত করা এবং জিডিপিতে আইসিটি খাতের অবদান ৫ শতাংশ নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়ন, কানেক্টিভিটি স্থাপন, ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, মোবাইল অ্যাপস উন্নয়ন এবং ই-কমার্স প্রসারসহ নানাবিধ প্রকল্প ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত প্রকল্প ও কর্মসূচির সুফলও পাচ্ছে দেশের মানুষ।
তিনি বলেন, দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সকল সরকারি অফিসসমূহকে একই নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়। ৫৮টি মন্ত্রণালয়, ২২৭টি অধিদপ্তর, ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ৬৪টি নির্বাচিত উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় একই নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনফো সরকার-২ প্রকল্পের আওতায় জেলা ও উপজেলার ১৮ হাজার ১৩০টি সরকারি অফিসের কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ৮০০টি প্রতিষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম, ২৫৪টি এগ্রিকালচার ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (এআইসিসি) ও ২৫টি টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে ২৫ হাজার ট্যাব বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে ৩৫৫ জমির উপর কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ পিপিপি মডেলে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বর্তমানে এর নামকরণ করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি’। যশোর জেলায় সদর উপজেলার বারান্দি মৌজায় ১২ দশমিক ১৩ একর জমির উপর প্রায় ২৪০ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি উদ্যোগে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ স্থাপনের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
তিনি বলেন, সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ১৬২ দশমিক ৮৩ একর জমিতে সিলেট ইলেক্ট্রনিক্স সিটির প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। ১২টি জেলা ও বিভাগে আইটি ভিলেজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ‘খুলনা আইটি পার্ক’ এবং মাগুরা সদরে ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকার কারওয়ান বাজারস্থ ১২তলা বিশিষ্ট টাওয়ারে কানেক্টিং স্টার্ট আপ ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। ভবনটির ১টি ফ্লোর স্টার্ট আপ কোম্পানিগুলোর জন্য নির্ধারিত রয়েছে। অন্য ফ্লোরগুলোতে ১৪টি আইটি/আইটিইএস কোম্পানিকে স্পেস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং ৩টি কোম্পানি ব্যবসা শুরু করেছে। এখানে ৫০টি স্টার্টআপ কোম্পানিকে এক বছরের জন্য অন্যান্য সুবিধাসহ বিনা ভাড়ায় জায়গা বরাদ্দ দেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার আইসিটি খাতে মানব সম্পদ উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ‘লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এন্ড গভর্নেন্স’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৩৪ হাজার জন আইটি প্রফেশনাল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক ফিচার লেডার তৈরির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ৩৮৮ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার জন আইটি গ্রাজুয়েটকে আইটি টপ আপ এবং ২০ হাজার জনকে ফাউন্ডেশন ট্রেনিং প্রদান করা হয়েছে এবং ই-গর্ভনেন্স প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৩ হাজার সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত ২০ হাজার জন মহিলাকে বেসিক আইসিটি লিটারেচি’র উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে চলতি অর্থবছরে আরো ২৫ হাজার যুবক ও যুবতীকে বেসিক আইসিটি ট্রেনিং এবং ১০ হাজার জনকে সাইন্স গ্রাজুয়েটকে এডভান্সড আউটসোর্সিং’র উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। ৭টি ক্যারাভ্যান বাসের মাধ্যমে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩২০ জনকে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সাপোর্ট টু ডেভেলপমেন্ট অব কালিয়াকৈর হাই-টেক পার্ক প্রকল্পের আওতায় স্কিল এনহেন্সমেন্ট প্রোগ্রামে ৫ হাজার জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪ হাজার ১২৭ জন গ্রাজুয়েট, আইসিটি গ্রাজুয়েটকে গ্রাফিক্স ডিজাইন, নেটওয়ার্কিং, জেএভিএ, থ্রিডি অ্যানিমেশন, এনড্রয়েড ইত্যাদি আইটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ইনফোসিস প্রোগ্রামের আওতায় ভারতের ইনফোসিস কেন্দ্রে ৯৮ জন আইটি গ্রাজুয়েটকে জেএভিএ এর উপর তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বিসিসি’র ইনস্টিটিউট বিকেআইআইসিটি ও ৬টি বিভাগীয় সদর কেন্দ্রের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে কাস্টমাইজড কোর্সে ১ হাজার ৪৪০ জন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ১১ হাজার ২৫৪ জন, মাস্টার ট্রেইনার ৭ হাজার ৮৯০ জন, ছাত্র-ছাত্রী ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৯ জন, ইউআইএসসি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণে ৫ হাজার ৬৭০ জন, ডিপ্লোমা ও পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্সে ৪১৮ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সক্ষমতা উন্নয়নে ৩৭৭ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৩ হাজার ৫৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগ ও অধিদপ্তরের তথ্য ও সেবার সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ৬শ’ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়। লেখাপড়ার বিষয়কে আনন্দদায়ক করে উপস্থাপনের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১৭টি টেক্সট বইকে ডিজিটাল টেক্সটবুক বা ই-বুকে রূপান্তর করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত ডাউনলোডের সংখ্যা ৫ লাখ ৫০ হাজার।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে উদ্ভাবনীমূলক কাজের জন্য ৩৯ জনকে ২ কোটি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গবেষণা কাজের জন্য মাস্টার্স-এ ২৩ জন, এমফিল-এ ২ জন, পিএইচডিতে ৬ জনসহ মোট ৭৬ জনকে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি ও বাণিজ্যিক তথ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়ার একটি সমন্বিত উদ্যোগ হিসেবে ৪ হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়ন পরিষদে, ৩২১টি পৌরসভায় এবং ৪০৭টি সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ১০০টির অধিক সরকারি-বেসরকারি সেবা কেন্দ্রগুলো থেকে নাগরিকদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেশের ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের ৪৫০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষের মাধ্যমে ৮৫ লাখ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আখচাষীদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৭ লাখ ডিজিটাল পুর্জি ইস্যু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নাগরিকগণ এখন সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকের কাছ থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারছেন। দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মোট ৪৮২টি হাসপাতালে একটি করে মোবাইল ফোন প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১০ হাজার বিষয়ে ১ লাখ পৃষ্ঠার কনটেন্ট নিয়ে জাতীয় ই-তথ্যকোষ তৈরি করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইন ট্যাক্স ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে আয়করের হিসাব বের করা, ই-টিআইএন প্রাপ্তি ও আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৮ লাখ নাগরিকের ই-টিন ব্যবহার করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীন ১ হাজার ৩৩৩টি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পোস্টাল ক্যাশ কার্ড সেবা প্রদান করা হচ্ছে। দেশের মোট ২ হাজার ৭৫০টি পোস্ট অফিস ও সাব-পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ১ কোটি ২৬ লাখ ইলেকট্রনিক মানি অর্ডার ইস্যু করা হয়েছে।

 

B/S/S/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে