2016-09-29_8_489437

ডেস্ক রিপোর্টঃ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থ সহায়তা ও নির্দেশ দিয়ে যারা দেশে জঙ্গিবাদে মদদ যোগাচ্ছে ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ জনগণকে পুড়িয়ে মারছে তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বুধবার রিজ কার্লটন হোটেলে আওয়ামী লীগের ওয়াশিংটন শাখার নেতা-কর্মীদের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিএনপি-জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা রুজু প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, এসব রাজনৈতিক মামলা নয়, এসব জনগণকে পুড়িয়ে মারার মামলা।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা অপরাধী তাদেরকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এছাড়া যারা অপরাধীদের সহায়তা করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়েছে তাদেরকেও অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। এ সময়ে শত শত দলীয় সমর্থক বিচারের সমর্থনে স্লোগান দিতে থাকে।
বিদেশীদের ওপর নির্ভর ও দেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের কাছে সারবস্তুহীন ঢালাও অভিযোগ করার জন্যে বিএনপি নেত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনগণের শক্তির ওপর তাদের কোন আস্থা নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ৭০ বছরে পা রেখেছেন। কিন্তু জাঁকজমকপূর্ণ কোন আয়োজন না করেই তাঁর জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যের কল্যাণে স্বার্থত্যাগের বিষয়টি বাল্যকালেই তিনি তাঁর মরহুম পিতা-মাতার কাছ থেকে শিখেছিলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যখন ওই সময়ে খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্যে সংগ্রাম চালাচ্ছে তখন তার পরিবারের সদস্যরা কখনই জাঁকজমকভাবে জন্মদিন পালন করেননি।
প্রধানমন্ত্রী সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। নিউইয়র্কে আসার আগে তিনি হাসপাতালে এই কবিকে দেখতে গিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জন্মদিন উদযাপনের জন্যে কেক কাটা আমার পছন্দ নয়। দেশের নির্যাতিত ও নিপীড়িত জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করা, পাকিস্তানী শাসকদের রুজু করা মামলা মোকাবেলা এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে চালিয়ে নেয়ার জন্যে তাঁর মায়ের যে অবদান তা স্মরণ করেন।
একইসঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ কীভাবে পুনর্গঠন করেছেন, স্বাধীনতাত্তোর দেশের অর্থনীতি পুন:নির্মাণ এবং ওআইসি ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি তিনি যে অনুধাবন করেছিলেন সেসব কথাও স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জমির সীমানা নির্ধারণ এবং মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ছিটমহল চিহ্নিতকরণ এবং মায়ানমার ও ভারতের সঙ্গে নৌ-সীমার মীমাংসার কাজ শুরু করেছিলেন। এছাড়া স্বাধীনতার পর তৎকলীন শেল ওয়েল কোম্পানীর কাছ থেকে গ্যাস ফিল্ড কিনে নেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গঠনে তার দূরদর্শী পদক্ষেপেরই পরিচায়ক।
তিনি বলেন, অবকাঠামো থেকে শুরু করে অর্থনীতির সকল মৌলিক কাজের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার সরকারের মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি যদি বেঁেচ থাকতেন তাহলে বিশ্বে বাংলাদেশ উদাহরণ তৈরি করতে পারতো।

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর তাঁর বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেন, বিদেশে প্রায় ৬ বছর তিনি উদ্বাস্তু জীবন কাটিয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর জেনারেল জিয়ার সামরিক জান্তাদের বিভিন্ন বাধাবিঘেœর মুখোমুখী হওয়ার পাশাপাশি নিজ দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কঠোর পরীক্ষার মুখোমুখী হতে হয়েছে।
অনুসারীদের উল্লাস ধ্বনির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কঠিন সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, বড় নেতারা ভুল করেছে তবে তৃণমূল কর্মীরা ভুল করেনি।
অবৈধভাবে জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখল ও বিএনপি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জিয়া সেনা আইন ও সংবিধান লংঘন করেছেন। যে দল অবৈধভাবে গঠিত হয়েছে- সেই দল জনগণের কল্যাণ করতে পারে না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, জিয়ার পুত্র (তারেক) অর্থ পাচারকারী, যা এফবিআই’র তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কখনও অসৎ পথে যাইনি। আমরা আমাদের নিজেদের ভাগ্য গড়ার চিন্তা করছি না। আমাদের চিন্তা কিভাবে জনগণের কল্যাণ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী শাসনকালে জিয়া, খালেদা ও এরশাদ আমলে সরকার ছিল সবচেয়ে দুর্বল এবং এই শাসকরা ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন অথবা ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা ইস্যু উত্থাপনে কখনোই সাহস পায়নি।
‘তারা তাদের নিজেদের ভাগ্য গড়ে তোলায় ব্যস্ত ছিল’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের নীতি ছিল দেশকে ভিক্ষুকে পরিণত করা এবং অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়া।
স্লোগান ও করতালির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ৬৮ বছর পর তাঁর সরকার ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় করে এবং প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করে। যা বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন কিভাবে তাঁর সরকার খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে, ভয়ানক বিদ্যুৎ সংকট সমাধান করেছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে এবং দেশকে কিভাবে ডিজিটালাইজেশনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সে বিষয় উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগের ক্ষেত্রে তাঁর চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। বিশ্ব ব্যাংক এ ব্যাপারে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ করছে।
তিনি বলেন, ‘আমি জনগণের জন্যই সবকিছু করেছি, যখনই আমি সমস্যার মুখোমুখী হয়েছি আমি জনগণের সমর্থন পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে প্রবাসীদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বাংলাদেশীকে জীবন দিতে হয়েছে। এখানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের হত্যা গ্রহণযোগ্য নয়… সব জায়গায়ই সন্ত্রাসবাদ এজন্য আরো সজাগ থাকতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে