untitled

বাংলাদেশের গার্মেন্স শিল্প ও সম্ভাবনা নিয়ে বিডি নীয়ালা নিউজ এর সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে কথা বলেন আজিজ চৌধুরি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো: সালাউদ্দিন চৌধুরী। নিজেকে মালিক পক্ষ না ভেবে শ্রমিক পক্ষ ভাবা এই সদা হাস্য উজ্জ্বল সালাউদ্দিন চৌধুরীরর একান্ত সাক্ষাতকার নেন রাহুল রাজ। চমক নিউজ এর পাঠকদের জন্য ব্যস্ততার মধ্যেও যে সাক্ষাতকার তিনি দিয়েছিলেন তার চৌম্বাংশ তুলে ধরা হল।

সদা পরিশ্রমী টগবগে তরুণ সালাউদ্দিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল এত অল্প সময়ে এত সফলতা পাবার পেছনে অনুপ্রেরণা কি? জবাবে তিনি জানান, ‘আমাদের পরিবার আগে থেকেই ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। আমি আমার বাবা ব্যবসা হাতে নিয়েছি। আমি ছাত্র জীবন থেকেই ব্যবসার সাথে জড়িত আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই আমি নিজের ব্যবসার প্রতি মনোযোগ দেই। তাছাড়া ব্যবসার প্রতি আমি ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত দুর্বল ছিলাম। আমার আন্তরিকতা এবং সততা জন্যই আমি নিজেকে ব্যবসায়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।’ বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশে গার্মেন্টস ব্যবসার পার্থক্য নিয়ে তিনি জানান, ‘ বর্তমানে গার্মেন্টস ব্যবসা বাংলাদেশকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। এই গার্মেন্টস বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে। ক্রিকেট বাংলাদেশকে বিশ্বের যে সব স্থানে পরিচয় করাতে পারেনি গার্মেন্টস সেটা পেরেছে। ইউরোপের অনেক দেশই ক্রিকেট নেই। আমেরিকা, ইটালি, জার্মান সহ ইউরোপের অনেক দেশ বাংলাদেশকে এখন গার্মেন্টস দিয়ে চেনে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এই সব দেশের মার্কেটে সহজেই পাওয়া যায়। দেশের বাইরে গিয়ে যখন দেখি কোন পোশাকের গায়ে লেখা মেড ইন বাংলাদেশ। তখন নিজের খুব গর্ব হয়। আমি নিজেও দেশের বাহিরে গেলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কিনে নিয়ে আসি। এখন সিঙ্গাপুর, মালোএশিয়া, দুবাই সহ অনেক দেশের বাজার দখল করেছে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক। আনন্দের কথা হল চীন এখন আইটি সেক্টরে চলে যাচ্ছে তাদের দেশের গার্মেন্টস ব্যবসার বেশির ভাগ বাংলাদেশে চলে আসবে। সামনে বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের আরো সুন্দর ভাবে বিস্তার লাভ করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ শুধুমাত্র গার্মেন্টস ব্যবসার কল্যাণে ব্যাঙ্কক-মলোএশিয়ার মত উন্নত দেশে পরিণত হবে।’ সরকার গার্মেন্টস ব্যবসার উন্নতিতে আরো কি কি ভূমিকা রাখতে পারে এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়নের বেশির ভাগ গার্মেন্টস ব্যবসার কল্যাণে এসেছে। বর্তমান সরকার ব্যবসার প্রতি আন্তরিক। তারপরেও আমলা জটিলটার জন্য অনেক সময় আমাদের বিভিন্ন বাধার সমুক্ষিন হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে একটি লাইসেন্স করতে সরকারি কর্মকর্তাদের মোট টাকা ঘুস দিতে হয় প্রকৃত পক্ষে সেই লাইসেন্স এর ফি অনেক কম। সরকারের এই আমলা জটিলতা দূর হলে আমাদের মত ব্যবসায়ীরা সহজে অনেক কিছুর সুযোগ পেতে পারে।’ শ্রমিক কোন্দল বা শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে অপর এক প্রশ্নে বিনয়ের সাথে তিনি জানান, দেশের এখন বেশির ভাগ ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক বিক্ষোভ নেই। untitled1শ্রমিকেরা এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল আছে। আগের থেকে বর্তমানে তাদের আয় অনেক বেড়েছে। বেতন ওভার টাইম মিলে এখন একজন শ্রমিকের প্রায় বিশ থেকে পঁচিশ হাজার টাকা আয় করতে পারছে। তারা এখন স্মার্ট ফোন বা রঙিন টিভির মত পণ্য সহজেই ব্যবহার করতে পারছে। বেতন বৃদ্ধির ফলে এখন আর শ্রমিক বিক্ষোভের সুযোগ নেই। তাছাড়া প্রায় সব গার্মেন্টস এখন সময়মত শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করে থাকে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে শ্রমিকদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকি। গত পহেলা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবসে আমি আমার কারখানায় শ্রমিকদের জন্য আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। সেখানে শ্রমিকেরা সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলেছ। তারা আবেগ ভরা কণ্ঠে জনসমুক্ষে জানিয়েছে, আমার ফ্যাক্টরির মত এতো সুযোগ সুবিধা তারা আর কোথাও পাননি। তাদের কথাতেই উঠে এসেছে শ্রমিকেরা সন্তুষ্ট থাকলে ফ্যাক্টরির উন্নতি করতে বেশি সময় লাগে না।’ রানা প্লাজা বা তাজরিন দুর্ঘটনার পরে বাংলাদেশকে পুরো বিশ্ব চিনেছিল একটু অন্য ভাবে। আপনার গার্মেন্টস গুলোতে বর্তমানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, এমন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবার জন্য বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ফায়ার ব্রিগেট এখন আমাদের বিনামূল্যে আগুন থেকে রক্ষা পাবার বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে থাকে। আমি নিজেও শ্রমিকদের সাথে প্রশিক্ষনে অংশগ্রহণ করি। নানা সময় আগুন লাগার মহড়া আমার এখানে অনুষ্ঠিত হয়। সবার সাথে আমিও দৌড়ে মাঠে চলে যাই। বর্তমানে সব গার্মেন্টসের সামনেই মাঠ রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যারা পারছে না তাদের ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

আমরা ফ্যাক্টরি শুরু করার আগে ইউরোপ থেকে কোটি টাকার অগ্নি নির্বাপণ প্রযুক্তি যুক্ত করেছি। আমার কাছে সবার আগে শ্রমিকের নিরাপত্তা। আমাদের ফ্যাক্টরি শত ভাগ সুরক্ষিত তাই আমরা আল্লার রহমতে ভাল সাড়া পাচ্ছি। আমাদের এখানে যত বাঁয়ার এসেছে তারা আমাদের ফ্যাক্টরি দেখে খুশি। শ্রমিকদের বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে আমার এখনে একটি ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন করেছি। যতক্ষন আমার ফ্যাক্টরি খোলা থাকে ততক্ষন এই ডে-কেয়ার সেন্টারে একজন লোক বসে থাকে। কর্ম প্রাণ সদ্য বিবাহিত এই মানুষটির স্ত্রী মাকসুদা চৌধুরী মিশা এখনও ছাত্র জীবন শেষ না করলেও স্বামীর সব কাজে প্রান্তর সাহায্য করে থাকেন। তিনি স্টাইলিশ গার্মেন্টস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এর পাশাপাশি সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত। শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে পরিশেষে তিনি বলেন, শ্রমিকের দেশের প্রাণ, শ্রমিকদের প্রতি আমাদের আরো বেশি নজর দিতে হবে, এই কর্মে সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। সাক্ষাতকারের একেবারে শেষে জানতে চাওয়া হয়েছিল আপনি নিজেকে কি ভাবে দেখতে পছন্দ করেন, আন্তরিকতার সাথে সালাউদ্দিন চৌধুরীর জানিয়েছিলেন, আমি নিজেকে সব সময় ম্যানেজিং ওয়ার্কার মনে করি। ম্যানেজিং ডিরেক্টর না হয়ে আমি একজন শ্রমিক প্রতিনিধি হতে চাই। আমিও গভীর রাত পর্যন্ত চিন্তা করি কীভাবে আমার ফ্যাক্টরি আরো ভাল ভাবে চলবে।

পরিশেষে চমক নিউজ এর মধ্য দিয়ে সবার সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করেন এই উদ্যমী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে