food-adulteration-655x360

বিডি নীয়ালা নিউজ(২০ই ফেব্রুয়ারী১৬)-স্বাস্থ ও চিকিৎসা প্রতিবেদনঃ  রাজধানীসহ সারা দেশে ওষুধের ফার্মেসিগুলোতে ভিটামিন ও ফুড সাপ্লিমেন্টের নামে রমরমা ব্যবসা চলছে। এক শ্রেণীর চিকিৎসককে প্রভাবিত করে রোগীদের  প্রেসক্রিপশনে লিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে নকল, ভেজাল ও নি¤œমানের  ভিটামিন ফুড সাপ্লিমেন্ট। কিছু কিছু কোম্পানি ওষুধ প্রশাসনের দেওয়া বৈধ লাইসেন্সের আড়ালে  নামে- বেনামে  অবৈধ ঔষধ ও ফুড সাপ্লিমেন্ট উৎপাদন ও বাজারজাত করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। তাদের বেপরোয়া তৎপরতার মাধ্যমে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে ফুড সাপ্লিমেন্টের নামে স্টেরয়েড সমৃদ্ধ ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, মিনারেল ও জিংকসমৃদ্ধ ঔষধ। উচ্চমূল্যের কারণে এই ফুড সাপ্লিমেন্টের ব্যবসায় সব পক্ষেরই মোটা অঙ্কের মুনাফার স্বার্থ জড়িত। জানা গেছে, গত কয়েক মাসে ঔষধ  প্রশাসনে অনেকগুলো অভিযানে নকল ভেজাল ওষুধের পাশাপাশি নি¤œমানের ফুড সাপ্লিমেন্ট ধরা পড়েছে। আটা ময়দা সঙ্গে রং, চিনি মিশিয়ে তৈরি এসব ভিটামিন ও ফুড সাপ্লিমেন্টের উৎপাদকরা নামিদামি ডাক্তারদের প্রভাবিত করে রোগীদের প্রেসক্রিপসনে লিখিয়ে দিচ্ছেন। রোগীরাও ডাক্তারের উপর আস্থা রেখে  নিয়মিত ব্যবহার করছেন এসব ভিটামিন ও ফুড সাপ্লিমেন্ট। তারা সরল বিশ্বাসে প্রতারিত হচ্ছেন। ঔষধ প্রশাসনের একজন পরিচালক জানান, ডাক্তররা শুধু ওষুধ প্রেসক্রাইব করবেন। এ ছাড়া তাদের প্রেসক্রিপশনে ফুড সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করার নিয়ম নেই। ফার্মেসিতেও এসব ফুড সাপ্লিমেন্টের বিক্রির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো তদারকির  ব্যবস্থা  না থাকায়  রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ফার্মেসিতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব।  ঔষধ প্রশাসন দাবি করে, ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ফার্মেসিতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব। ঔষধ প্রশাসন দাবি করে ফুড  সাপ্লিমেন্টের  বিষয়টি তদারকির  এখতিয়ার তাদের নয়।  এটি দেখবে স্বাস্থ্য অধিদফতর কিংবা  সিভিল  সার্জন  অফিস।  কিন্তু  মাঠপর্যায়ে আসলে কোনো তদারকির ব্যবস্থাই নেই। এগুলো  বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক পণ্যের তালিকায় না থাকায় এগুলোর ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের কতৃত্ব নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।  জানা গেছে এসব মানহীন ভিটামিন ও ফুড সাপ্লিমেন্টের বাজারজাতের  সঙ্গে  জড়িত রয়েছে প্রায় শতাধিক ওষুধ কোম্পানি। তারা এসবের কিছু আমদানি করে এবং  অধিকাংশই নকল ও ভেজাল করে বাজারে ছাড়ে।  ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর সুত্র জানায়, ঔষধের ফার্মেসি গুলোতে ফুড সাপ্লিমেন্ট সামগ্রী বিক্রয়, প্রর্দশন ও মজুদ নিষিদ্ধ। অথচ এসব অবৈধ ফুড সাপ্লিমেন্ট কোম্পানির উৎপাদিত ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে অবাধে বাজারজাত করা হচ্ছে। সম্প্রতি নামি দামি অনেক ঔষধ কোম্পানী নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশকে পাশ কাটিয়ে অবৈধভাবে ফুড সাপ্লিমেন্টের ব্যানারে বাজারে একাধিক আইটেমের ঔষধ সামগ্রী উৎপাদন ও  বাজারজাত করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঔষধ অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর অনুযায়ী কোন ডাক্তার অননুমোদিত ঔষধ প্রেসক্রিপসনে লিখতে পারবেন না। তবে এই অধ্যাদেশে কোন শাস্তির কথা উল্লেখ নেই। যা একটি শুভংকরের ফাঁকি। (৮ জুন, বাংলাদেশ প্রতিদিন’২০১৫)

ফলাদিতে ছয় দফা কেমিক্যালঃ

বাজারের কলা, আম, পেঁপে,পেয়ারা থেকে শুরু করে আপেল, আঙ্গুর, নাসপতিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় সব ফলেই মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। সাধারণ ফল-মুলের উজ্জল রং ক্রেতাদের নজর কাড়ে, সেগুলো বিক্রিও হয় বেশী দামে। তাই অপরিপক্ক ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং তা উজ্জল বর্ণে রুপান্তর করার জন্য অধিক ক্ষার জাতীয় টেক্সটাইল রং ব্যবহার হচ্ছে অবাধে। ফল গাছে থাকা পর্যায় থেকে বাজারে বিক্রি করা মুহুর্ত পর্যন্ত এক একটি ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মূলত গ্যাস জাতীয় ইথাইলিন ও হরমোন জাতীয় ইথরিল অতিমাত্রায় স্প্রে করে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করার কারণেই ফলগুলো রীতিমতো বিষে পরিণত হয়। ব্যবসায়ীরা দাবী করেন, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতেই ফলমূলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানো হয়। অন্যদিকে ফলমূল দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করতে ফরমালিনসহ আরও কিছু বিষাক্ত পদার্থের ও ব্যবহার চলে অহরহ। গত ৬ জুন’২০১৫ আর টি ভি সন্ধ্যার খবরে রাঙামাটিতে কলা, আনারস ও কাঠালে রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করে অপরিপক্ক ফল পাকানোর সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ইথাইলিন বা ক্যালসিয়াম কার্বাইড প্রয়োগের কারণে ২-৪ দিনের মধ্যেই ফল হলুদ রং ধারণ করে। বাস্তবে এসব ফল বাইরে পাকা মনে হলেও এর ভিতরের অংশে অপূর্ণতা থেকেই যায়। পরবর্তীতে সে ফলগুলো খাওয়ার কারণে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল-শুরু হয় নানা অসুখ-বিসুখ। অপরিপক্ক ফলমূলের স্বাদ-গন্ধ, ভিটামিনও অনেক কমে যায়। ফল পাকাতে যে বিপজ্জনক রাসায়নিক পর্দাথটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তার নাম কার্বাইড।

সংবাদপত্র ও বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা  যায়, বাগান থেকে আম পাড়ার পর কমপক্ষে তিনবার বিভিন্ন রাসয়নিক দ্রব্য স্প্রে করা হয়। রাতে গুদাম বন্ধ করার আগে ফরমালিন স্প্রে করা হচ্ছে। ফলে ভোরে আমে ফরমালিনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। তা ছাড়া অতিরিক্ত তাপে ক্যালসিয়াম র্কাবাইড মেশানো আম রাখলে তা ক্যালসিয়াম সায়নাইডে পরিণত হতে পারে। যা অত্যন্ত মারাত্বক বিষ। কার্বোহাইড্রেট যুক্ত ফল চেনা অতটা কঠিন কিছু নয়, প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলে সমান (ইউনিফরম) রঙ হবেনা, বোটার অংশে লালছে আভা রং হবে এবং ফল মিষ্টি হবে। কৃত্রিমভাবে পাকানো ফলে সব অংশে সমান রঙ হবে এবং ফলের ভিতরে চামড়ার অংশে একটু তিতা হবে। তা ছাড়া ফলের এক অংশে টক অন্য অংশে মিষ্টি হয়। তবে আশার কথা হল এবছর রাজশাহীর বর্তমান জেলা প্রশাসন অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখছেন যাতে অপরিপক্ক আম পাড়া না হয় এবং আমে ব্যবসায়ীরা যেন আড়তে ব গোডাউনে কোনভাবেই যেন কার্বাইড না মেশান (বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৩ জুন’২০১৫।

মুড়িতে ইউরিয়াঃ

এখানেও ঢুকে পড়েছে ভেজালের বিষবাষ্প। গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের বারোতোপায় দেদার আসছে ইউরিয়া সার। লবণের বদলে মেশানো হচ্ছে সেই ইউরিয়া। কারখানায় ভাজা মুড়ির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আড়তদারদের প্ররোচণায়  গ্রামের সহজ সরল বউ-ঝিরাও মুড়িতে মেশাচ্ছেন এই বিষ। প্রতিযোগিতার বাজারে মুড়িকে লম্বা, সাদা, ফাঁপানো ও আকর্ষণীয় করতে মুড়ি বেপারি এবং আড়তদাররা শ্রমিকদের সার সরবরাহ করছেন। তাদের প্ররোচণায় না বুঝে ঘরে ঘরে মুড়ি শ্রমিকরা লবণের বদলে চালে ইউরিয়া মিশিয়ে মুড়ি তৈরি করছেন।  ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ির কুফলও জানেন না মুড়ি শ্রমিকরা। এক কেজি ইউরিয়ায় প্রায় ১৬০ কেজি মুড়ি ভাজা হয়। লবণের দাম বেশি হওয়ায় আর বেপারী আড়তদাররাও খুশি হওয়ায় চালে এই ইউরিয়া মিশিয়েই এখন মুড়ি ভাজা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মুড়ি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে সাত-আট মাসের ব্যবধানে বারোপোতায় প্রায় একডজন সারের দোকানও গড়ে উঠেছে। এসব সারের ক্রেতা শুধু মুড়ি ব্যাপারী, আড়তদার ও শ্রমিকরা। বারোপোতায় এখন শুধু বিআর১১ ও ব্রি ধান২৮ ধানে মুড়ি ভাজা হচ্ছে। দুই-চার বছর আগেও এখানে ঘরে ঘরে আউশ ধানের মুড়ি ভাজা হতো। ব্যবসায়ী আজিজুল জানান, বেপারী-আড়তদাররা যাচ্ছেতাই ধান কিনে দিচ্ছেন শ্রমিকদের। দরিদ্র শ্রমিকরা চালে ইউরিয়া মিশিয়ে সেই ধান থেকেই মুড়ি তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মুড়িতে ইউরিয়ার সঙ্গে হাইড্রোজ ও মেশানো  হচ্ছে। তা চিনার উপায় হল- এ ধরনের মুড়ির শরীরে অসংখ্য ছিদ্র থাকে, দেখতে খুব সাদা রঙের হয়।  স্বাদ পানসে হয়ে যায়।

দুষিত পানি বোতলেঃ

ফলমুল, দুধ, মাছে ফলমালিন-কার্বাইডের বিষ, অন্যান্য খাদ্যপণ্যও ভেজালমুক্ত রাখা যায়নি। এমকি জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে জরুরী ‘পানি’ পর্যন্ত  নিরাপদ থাকছে না। যত্রতত্র নকল কারখানা বানিয়ে পুকুর ডোবা এবং ওয়াসার পানি বিশুদ্ধকরণ ছাড়া বোতলজাত করেই বিশুদ্ধ মিনারেল পানি বলে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্লাস্টিক জার (বড় আকারের বোতল) ভরা পানি বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালতে পৌঁছানোর মাধ্যমেও জমে উঠেছে দুষিত পানির রমরমা ব্যবসা। জীবন রক্ষাকারী পানি নিয়ে মরণঘাতী খেলা চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের পরীক্ষাগারে বোতলজাত পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অতি নি¤œমানের পানি হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে। বিএসটিআই কর্মকর্তারা দেশের সর্বত্র নি¤œমানের পানি বাজারজাত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, বেশীরভাগ পানি কোম্পানী নকল এবং ভুয়া। সংশ্লিষ্ট পরিচালক জানিয়েছেন, মাত্র ১৯টি কোম্পানী অনুমোদন নিলেও দেশজুড়ে বোতলজাত পানির জার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক। এর মধ্যে একটিরও বিএসটিআইয়ের অনুমোদন নেই। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই ওয়াসার সরবরাহ লাইনের পানি গামছায় ছেকে বোতলে ভরে বাণিজ্য করা হচ্ছে।

দুধ নয় পুরোটাই নকলঃ

শুধু ভেজাল দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছেন না এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী, এবার নকল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন তারা। এই দুধ সংগ্রহে কোনো গাভীর প্রয়োজন পড়ে না, কষ্ট করে গড়ে তুলতে হয় না গবাদি পশুর খামারও। ছানার পানির সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে সহজেই তৈরি করা হচ্ছে এমন ‘বিষ’। পরে  ‘খাটি দুধ’ হিসেবে তা চালান হয়ে আসছে রাজধানীতে। দীর্ঘ সময় সতেজ রাখতে এতে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। জানা গেছে পানি গরম করে তাতে অ্যারারুট মিশিয়ে সহজেই নকল দুধ তৈরি করা যায়। তবে প্রয়োজন পড়ে আরও কয়েক পদের রাসায়নিক পাউডারের। যা পানিতে মিশিয়ে একেবারে সাদা দুধের আকার ধারণ করে। খালি চোখে তা ধরা অসম্ভব। এর শিকার হচ্ছেন পূর্ণ বয়স্ক থেকে শিশু। চিকিৎসকরা বলছেন, কৃত্রিম উপায়ে তৈরি নকল দুধ পানে পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি রয়েছে। এর প্রভাব পরতে পারে কিডনি বা লিভারের মতো অঙ্গ-প্রত্যংগেও। নকল দুধ তৈরির কারখানাগুলোতে ছানার ফেলনা পানি, খাবার পানি, থাইসোডা, পার অক্সাইড, ময়দা, ভাতের মাড় ও চিনি মিশিয়ে আগুনে ফোটানো হয় এবং পরে কাটিং ওয়েল ও এসেন্স মিশিয়ে দুধের সুবাস দেওয়া হয়। ধলেশ্বরী ঘাট থেকে নকল দুধের চালান পাঠানো হয় দুটি নামিদামি ডেইরি প্রজেক্টে। পরে ওই প্রজেক্টের প্লাস্টিক মোড়কে প্যাকেটজাত দুধ হিসেবে বাজারে বাজারে পৌছে যায়। আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের ডা. এস কে রায় জানান, রাসায়নিক মিশ্রিত এসব নকল দুধ পানে মানবদেহ ডায়রিয়া, জটিল পেটের পীড়া, কিডনি ও লিভার রোগে আক্রান্ত হচেছ প্রতিনিয়ত। শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুকি আরো মারাত্বক।

বাজারে চলমান একমাত্র হোমমেড রসগোল্লা নামের পণ্যটি আগাগোড়াই ভেজাল প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাবার আদালতে মামলা রজু করা হয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) অঞ্চল-১ এর প্রধান পাবলিক অ্যানালিস্ট রাসায়নিক পরীক্ষার পর ডিসিসি স্বাস্থ্য বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এত দেখা যায়, এই রসগোল্লায় আদ্রতা আছে মাত্র ০.১৭ শতাংশ। ল্যাকটিক এসিডের অম্লতা ০.৯৮ শতাংশ। দুধে-চর্বির পরিমাণ ১০ শতাংশ থাকার কথা থাকলে ও তাতে পাওয়া গেছে মাত্র ১.০ শতাংশ। কঠিন বস্তুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৯৫.৮৩ শতাংশ। তা ছাড়া পরীক্ষাগারে প্রমাণিত হয়েছে, এটি রসগোল্লা নয়, বরং শুকনো পাউডার জাতীয়  অ™ূ¢ত খাদ্য।

ভেজাল খাদ্য বিদেশে রপ্তানী:

যে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত খাদ্যপণ্য বিশ্বের ১৭৩ দেশে রপ্তানী হয় বলে বিজ্ঞাপনে বলা হয়, তাদের পণ্যগুলি আপাদমস্তক ভেজালে ভরপুর। শুধু দেশে নয় ভেজাল খাদ্য আমরা বিদেশে ও রপ্তানি করতে পারি। সংবাদপত্রের বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায় গবেষণাগারে প্রমাণিত জনপ্রিয় ব্রা›েডর হট টমেটো সসে প্রাণঘাতি অনেক উপাদান পাওয়া গেছে। আদালত কতৃক পণ্যটির উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। দেখার কেউ নেই, ধরার কেউ নেই, তাই বহাল তবিয়তে পণ্যটি চালু আছে। আদালত ইতিপূর্বে কন্ডেন্স মিল্ক, মেলানিন মেশানো গুড়া দুধ নিয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। সমস্যা হল আমরা তার বাস্তবরুপ দেখতে পাইনা। বর্তমানে ভারতে উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানে নেস্লে কোম্পানীর ম্যাগী নুডুউলসে ক্ষতিকর মাত্রায় সীসা পাওয়া গিয়েছে। যেখানে থাকার কথা ২-২.৫ শতাংশ সেখানে পাওয়া গিয়েছে ১৭ শতাংশ। আদালত কতৃক নেস্লের পণ্যটি ভারতে বিক্রয়-বিপনন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কিন্ত আমাদের দেশে এখনও তা দেদারচে বিক্রয় হচেছ, দেখার কেউ নেই। (এটিএন বাংলা-মে’২০১৫)।

রুখে দাড়ান খাবারে রাসায়নিক সন্ত্রাস

গত ১৫ জুলাই’২০১৪ ঢাকা  সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা  বিগ্রেডিয়ার  জে. আবদুল্লাহ আল-হারুনের  তথ্যমতে, ঠিক দুই দিন  আগে রাজধানীর  বিভিন্ন চোখ-ধাঁধানো সুপার শপ থেকে সৃহীত ১৫টি কোম্পানির পণ্য, যার মধ্যে  আটটি ভেজাল, বাকিগুলো  সহনীয় পযার্য়ে আছে। ভেজালের তালিকায় আছে নামীদামি ব্রান্ডের সব সয়াবিন ও খাটিঁ সরষের তেলসহ বেশ কিছু ভোগপণ্য । এর আগের এক সমীক্ষায় দেখা  গেছে, বাজারের  প্রায় ৯৬ শতাংশ গুড়ো  মসলায় ভেজাল।  সব কটি বেসরকারি কোম্পানির তরল মানগত পরীক্ষায় ফেল মেরেছে। এর আগে কাটিং ওয়েল দিয়ে কোম্পানিগুলো কৃত্রিম গরুর দুধ বানিয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়েছিল। শিশুরা সেটাকে দুধ বলে পান করেছে।  কিছুদিন আগে দেশের নামকরা একটি মশলা কোম্পানি আদালত থেকে জরিমানা দিয়ে এসেছে, এদের খাঁটি সরষের তেলেও ভেজাল প্রমাণিত ।

খাবারে ভেজাল আজ কোনো গোপনীয় ব্যপার নয়। সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদের মধ্যেও বৈধতা পেয়েছে।  মহাসমারোহে প্রায় সব ধরণের খাদ্যপণ্যে মরণব্যধির নানা ধরণের বিষাক্ত পদার্থ মেশানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা অনেকে জানিই না ফরমালিন, কার্বাইড  কি ? কী এর অপকারিতা? কী ধরনের রোগ হতে পারে রাসয়নিক পদার্থগুলোর প্রভাবে ? সবচেয়ে আলোচিত ’ফরমালিন’। এটা একধরণের রাসায়নিক পদার্থ, যা ফল, মাছ ও মাংসে  মিশিয়ে পচন রোধ করা হয়। মূলত জীবাণুনাশক ও প্রাণীর মরদেহ সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হয় এটি। ব্যাকটেরিয়া নাশক হওয়ায় কস্মেটিক তৈরিতেও এটি ব্যবহার করা হয়।  বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছেই বরফের সঙ্গে বিষাক্ত ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বর্ণনায়, ফরমালিন ব্যবহারে মানুষের দেহে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা যেমন- পাকস্থলির  ক্যানসার, দৈহিক  বিকলাঙ্গতা এমনকি  প্রাণহানিও ঘটাতে পারে। মাত্রা বেশি থাকলে শরীর অবশ হয়ে যেতে  পারে।  বৃক্ক, যকৃৎ, ফুলকা, পাকস্থলী ও লিভার সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কিন্তু  কীভাবে চিনব মাছে ফরমালিন আছে?

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মাছের দেহ শক্ত হয়ে যায়, যেন আমরা কেনার সময় ভাবি মাছ তাজা আছে। আঁশ উজ্জল না হয়ে ধুসর রঙের হয়ে যায়, ফুলকাও  ধুসর রঙের হয়।  এসব দেখে মাছ কিনলে ফরমালিনযুক্ত মাছ পাওয়া যেতে পারে।  ফরমালিন  ব্যবহার মাছে সাধারণত মাছি বসে না। গ্রীস্মকালীন প্রায় সব ফলে এখন ফরমালিন ও কার্বাইড অথবা অন্য কোনো রাসায়নিক স্প্রে করা হচেছ। এই সন্ত্রাস থেকে রেহাই পেতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উন্নত প্যাকেজিং প্লান্ট হাতে নেওয়া যায়। যাতে কিছু  দিন ফল সংরক্ষণ করা যায়। আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দিয়ে গ্রীস্মের ফলগুলো জীবাণুমুক্ত করে প্যকেট করা যেতে পারে। সর্বোপরি দরকার ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার বিজ্ঞানসম্মত উপায় আবিষ্কার করা । খাবারে যেসব রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হচ্ছে, তা বিদেশ থেকে আমদানি করা। প্রয়োজনীয় কাজে আমদানি করতে আমাদের দ্বিমত নেই। চাইছি যত্রতত্র ব্যবহারের নিয়ন্ত্রন। সাংবাদিক নঈম নিজাম বলেন, যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ খাদ্যকে বিশুদ্ধ করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে আমরা খাদ্যকে বিষে পরিণত করার জন্য রীতিমত উঠে পড়ে লেগেছি। যা অত্যন্ত দু:খ জনক। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে দেশে যেখানে ১৯৮০ এর দশকে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ছিল  মাত্র ১০ লাখ সেখানে বর্তমানে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮০-৯০ লাখ, বর্তমানে প্রায় ২০-২২ শতাংশ লোক হৃদরোগে আক্রান্ত এবং ১০-১২ লক্ষ্য লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত (বাংলাদেশ প্রতিদিন’এপ্রিল-২০১৫)। সুতরাং পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য চাই কঠোর আইনের প্রয়োগ। এসব রাসয়নিক  দ্রব্য আমদানি, সংরক্ষণ, মজুদকরণ, বিতরণ, ব্যবহার ও উম্মুক্ত বিক্রির ক্ষেত্রে  কঠোর নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যথেষ্ট অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে এবং জনগণকে ভেজাল খাদ্য ক্রয় ও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিটি মানুষ নিজে সচেতন হবেন এবং অন্যকে সর্তক করবেন। এ ব্যপারে সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে