সাম্প্রতিক সংবাদ

কোন শিশুই যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

sheikh-hasina

ডেস্ক রিপোর্টঃ সকল শিশুরই সমাজে সমান অধিকারের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোন শিশুই যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় এবং শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের আজকে খাদ্যের কোন অভাব নেই কাজেই কোথাও কোন শিশুই যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়। … আমরা প্রত্যেকটা মানুষেরই খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চাইতেন এদেশের কোন মানুষ আর দরিদ্র থাকবে না। কোন শিশুই মায়ের কোলে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে না। প্রত্যেকটা মানুষ তার জীবনের অধিকার পাবে। কাজেই তাঁর সেই আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের বাড়ির আশপাশে যারা দরিদ্র শিশু আছে তারা কেমন আছে, সে লেখাপড়া করতে পারছে কি না, তার গায়ে কাপড় আছে কি না, তারা পেটভরে খেতে পারছে কি না দয়া করে এইসব শিশুদের দিকে একটু নজর দেবেন। সেটাই আমার আহবান।’
তিনি আরো বলেন, ‘কারণ এটুকু করতে পারলে আপনি দেখবেন আপনার শিশুটির সঙ্গে কিন্তু এই শিশুটিও বড় হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
‘থাকবে শিশু সবার মাঝে ভালো, দেশ-সমাজ, পরিবারে জ্বলবে আশার আলো’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৬ উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চাইতেন এদেশের কোন মানুষ আর আর দরিদ্র থাকবে না। কোন শিশুই মায়ের কোলে ধুঁকে ধুঁকে মারা যাবে না। প্রত্যেকটা মানুষ তার জীবনের অধিকার পাবে। কাজেই তাঁর সেই আদর্শ বুকে নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে আমরা আরো সুন্দর করে গড়ে তুলবো। আমাদের বর্তমানকে আমরা উৎসর্গ করবো আমাদের শিশুদের সুন্দর আগামীর জন্য। নিরাপদ ও সুন্দর জীবন যেন তারা পায়।
প্রধানমন্ত্রী শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, সোনামণিরা তোমাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ আমরা গড়ে তুলবো, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ,আজকে বাংলাদেশে খাদ্যের কোন অভাব নেই। কাজেই কোথাও কোন শিশুই যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দরিদ্র হয়ে কেউ জন্মায় না, এটা তার ভাগ্য। একটা দরিদ্র পরিবারে জন্ম বলেই সে দরিদ্র। কিন্তু ঐ শিশুটি ধনীর ঘরে জন্মালে সেওতো ধনীই হত, কাজেই এই ব্যবধানটা যেন শিশুদের মাঝে কোনমতেই যেন না দেখা দেয়। এই বিষয়টা ছোট্টবেলা থেকেই শিশুদের শেখানো একান্তভাবেই দরকার।
তিনি বলেন, একটি শিশু পবিত্র শিশু। সে যেখানেই থাকুক সমাজে তাঁর সমান অধিকার রয়েছে। কাজেই এই অধিকারটা যেন সে নিশ্চিতভাবে পায় তা সকলে দেখবেন, সেটাই আমি আশা করি। আমরা প্রত্যেকটা মানুষেরই খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে চাই। কাজেই আমাদেন দেশে একটি শিশুও যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়।
প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ১৬ কোটি মানুষের খাবার আমরা নিশ্চিত করছি সেখানে আমার শিশুরা কেন না খেতে পেয়ে কষ্ট পাবে?
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ এডুয়ার্ড বেইগবেডার এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম।
কোমলমতি শিশুদের পক্ষে শিশু বিকাশ কেন্দ্র গাজীপুর এবং আজিমপুরের দুই শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার মীম ও মুজিবুর রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিশুরা জাতি গঠনের মূল ভিত্তি, তারাই আগামীর ভবিষ্যত। সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিবে আজকের শিশুরা। বিশ্ব পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে। তাই শিশুদেরকে যোগ্য করে গড়ে তোলা; পারিবারিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সমান অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বৈষম্যহীন শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুর খুব অল্প সময় মাত্র সাড়ে তিন বছরে আমাদের যে সংবিধান দিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেও শিশুদের বিষয়টি বাদ পড়েনি। তিনি শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালে শিশু আইন করেন। তখনও জাতিসংঘ শিশু অধিকার আইন করেনি, তারা করেছে ১৯৮৯ সালে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে শিশুদের জন্য রাষ্ট্রকে বিশেষ বিধান প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। সংবিধান, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ এবং জাতির পিতা প্রণীত শিশু আইন অনুযায়ী শিশুদের কল্যাণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের শিশুরা যেনো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেজন্য তাঁর সরকার নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বইয়ের বোঝা বইতে যেন না হয় সে জন্য আমরা ই-বুক করে দেব। বাচ্চারা ট্যাব নিয়ে স্কুলে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত করতে কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। কোনো ছেলে-মেয়ে যেনো স্কুল থেকে ঝরে না পড়ে সেদিকে আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি। আমাদের সরকার বই কেনার ঝামেলা নিয়ে নিয়েছে, দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছে। হাওর এলাকা, পাহাড়ি এলাকায় শিশুদের দূর থেকে স্কুলে আসতে কষ্ট হয়। তাই আবাসিক স্কুল করে দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে শিশুদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম ও আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা, প্রতিটি বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপন ও শ্রমজীবী কিশোর-কিশোরী , অনগ্রসর পরিবারের শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব শিখন কেন্দ্র চালু করা, শিশুদের প্রতিভা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশে ২০১২ সাল থেকে ভাষা ও সাহিত্য, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ- এই চার বিভাগে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ কার্যক্রম পরিচালিত করা, প্রাথমিক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু,দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও আয়োজন,প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন সহ পথশিশু, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ও বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুদের কল্যাণে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সরকারি উদ্যোগের তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি শিশুর ঝড়ে পড়া রোধে বিদ্যালয়ে শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি ও মিড ডে মিল চালুর উল্লেখ করে এই কাজে সরকারের পাশাপাশি স্ব স্ব এলাকার বিত্তবান এবং জন প্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
সারাদেশের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে শিশুদের জন্য কিডস্ কর্নার ও সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার জন্য উন্মুক্ত মঞ্চ তৈরি এবং শিশু-কিশোরদের সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে কিশোর-কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র, সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, ‘সেফহোম’ ‘প্রবেশন ও আফটার কেয়ার সার্ভিস’ চালু করার সরকারি উদ্যোগের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শিশুদের গভীরভাবে ভালোবাসতেন। এ কারণে তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে আমরা ‘জাতীয় শিশুদিবস’ ঘোষণা করেছি। তিনি বলেন, জাতির পিতা ছাত্রজীবন থেকেই দরিদ্র্য-অসহায় সহপাঠীদের সাহায্য করতেন। তাদেরকে আপন করে নিতেন। আমি চাই তোমরা জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে সবসময়ই দরিদ্র, অসহায় ও প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়াবে।
এ সময় ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নিহত বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র এবং তাঁর ছোট ভাই শেখ রাসেলের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের মতো আমারও একটি ছোট্ট ভাই ছিল। আমি তোমাদের মাঝে আমার সেই ছোটভাই রাসেলকে খুঁজে ফিরি।’
তিনি শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের জন্য জাতির পিতা এই সুন্দর দেশ দিয়ে গেছেন। আমার প্রত্যাশা, তোমরা বড় হয়ে জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে তাঁর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলবে। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাপূর্ণ আসনে তুলে ধরবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিশুদের স্বভাবিকভাবে বিকশিত হতে দেয়ার জন্য তাঁদেও শান্তি প্রদানের মানুষিকতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন,‘শিশুরা কুঁড়ির মতো। ওদের ফুল হয়ে ফুটতে দিতে হবে। তাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন মমতা, ভালবাসা অর্থাৎ শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যা। শিশুরা সবসময় বন্ধুর মতো আচরণ প্রত্যাশা করে। তাই শিশুদেরকে শারীরিক শাস্তি প্রদানের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর প্রশিক্ষণার্থী শিশুদের পরিবেশনায় ‘সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাও বাংলাদেশ’ শীর্ষক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী শিশু একাডেমীতে শিশুদের জন্য একটি ডিজিটাল লাইব্রেরীরও উদ্বোধন করেন।

 

বি/এস/এস/এন

Facebooktwitterredditpinterestlinkedinmail

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com
shared on wplocker.com