কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন শরিফ অবমাননার ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একটি স্বার্থান্বেষী মহল গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জননিরাপত্তা সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা তদন্তের মাধ্যমে বের করা হবে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সবাইকে আমরা অবশ্যই খুঁজে বের করব। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে। এটা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সব জায়গায় প্রচারিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। সেটা ফেসবুকের মাধ্যমে সব জায়গায় চলে যায়। সেই প্রেক্ষিতে আমাদের হৃদয়বিদারক কিছু ঘটনাও ঘটেছে। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে চারজন মানুষের নিহত হওয়ার দৃশ্য দেখেছি। সিলেটের জকিগঞ্জ, চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য সারারাত কাজ করেছে। আজকে আমরা এখানে বসেছি। যে চারজন নিহত হয়েছেন, সেখানে কারো গাফিলতি যদি থেকে থাকে, আমরা সেটাও দেখছি। আমরা আইননানুগ ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, আমরা মনে করছি—এটা উদ্দেশ্যমূলক, কোনো স্বার্থান্বেষী মহল, কোনো ষড়যন্ত্রকারী, চক্রান্তকারীর কর্ম। তদন্ত শেষে আমরা সমস্ত ঘটনা জানাতে পারব। ইতোমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী যেখানেই যেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে।
কুমিল্লার ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আমরা অবশ্যই খুঁজে বের করব। কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি। আমরা মনে করছি খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব। সেই জায়গায় আমরা কঠোর অবস্থায় রয়েছি। যারাই করেছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা স্পস্ট করে বলতে পারি—যারা ধর্মকর্ম করেন, যারা ধর্মকর্মে বিশ্বাস করেন, তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারেন না। আমাদের দেশে যে সাম্প্রতিক মেলবন্ধন আছে, সেটা বিনষ্ট করার জন্য একটা প্রচেষ্টা বলে আমরা মনে করি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার চেষ্টাও আমরা দেখেছি। যারা এই ধরনের চেষ্টা করছেন কিংবা অব্যাহত রাখবেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সভায় আলোচনা হয়েছে, যদি কেউ উস্কানি দিয়ে থাকেন বা কেউ যদি জড়িত থেকে ষড়যন্ত্র করে থাকেন তাকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের একটা সিদ্ধান্ত ছিল, যেখানে পূজা হবে সেখানে সিসিটিভি বসাবেন এবং আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদেরও ভলান্টিয়ার থাকবে। কিন্তু অনেক পূজামণ্ডপে সেগুলো করেননি। আমি আবার আহ্বান করছি, সমস্ত পূজামণ্ডপে যেন সিসিটিভি এবং নিজস্ব ভলান্টিয়ার নিয়োগ করেন।
তিনি বলেন, প্রতিমা বিষর্জন পর্যন্ত যেন কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, সেজন্য সবাই যেন ধৈর্য সহকারে, আমাদের যে ঐতিহ্য সবাই যেন মিলে মিশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখে। কোনো উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
কুমিল্লায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। সারাদেশে বেশকিছু বিশৃঙ্খলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে, যেখানেই বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে সেখানেই গ্রেফতার করা হবে। আমরা চাই, সুনির্দিষ্টভাবে যারা জড়িত ছিল বা উস্কানি ছিল তাদের গ্রেফতার করতে।
কয়েকেটি জেলায় বিজিবি মোতায়েন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হয়। যদি মনে করা হয়, বিশৃঙ্খলা হতে পারে তখন ডিসির অনুরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে বিজিবি আসে।
কুমিল্লার ঘটনার তদন্ত চলছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, যারাই করেছে, যদি দেশের ভেতর থেকে করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চিহ্নিত করে আপনাদের সামনে হাজির করবে।
মন্দিরে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য না থাকা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবার কোভিডের কারণে না রেখে টহলে রাখার সিদ্ধান্ত হয় হয়। আজকে আবার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেখানে প্রয়োজন সেখানেই আনসার বাহিনী চলে যাবে।
ban/N