ডেস্ক রিপোর্টঃ আমাদের সমাজে যত ধরণের ভ্রান্তমত বা প্রথার প্রচলন আছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো গাইরে মাহরাম (যার সাথে বিবাহ জায়েজ) পুরুষকে কনের পক্ষ থেকে বিবাহের উকিল বানিয়ে তাকে ‘উকিল বাপ’ বলে সম্বোধন করা। অথচ ইসলামী শরীয়তে এর কোন ভিত্তি বা নিয়মই নেই। অপরদিকে এটা আমাদের সমাজে অন্যতম একটি মারাত্মক গুনাহের কারণে পরিণত হয়েছে।

যার ফলে মানুষ ইসলামী শরীয়তের অন্যতম ফরজ বিধান ‘পর্দাপুশিদা’ লঙ্ঘনকারীতে পরিণত হচ্ছে।

ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে, বিবাহের উকিল হওয়ার দ্বারা কেউ মাহরাম (যাকে বিবাহ করা যায় না) হয়ে যায় না বরং উল্ট সে গায়রে মাহরামই (যাকে বিবাহ করা জায়েজ) থেকেই যায়। তাই তাকে ‘উকিল বাপ’ ডাকা উচিত কাজ নয়। তদুপরি তাকে ‘উকিল বাপ’ ডাকা হলেও সেই কারণে বা কনেকে নিজের মেয়ের মত মনে করার পরেও সে তার আপন পিতার মত মাহরাম (যার সাথে বিয়ে জায়েজ) বলে সাব্যস্ত হবেন না। তাই তার সাথে সর্বদাই গায়রে মাহরামদের মতই পর্দাপুশিদা সহ যাবতীয় শরীয়তের হুকুম প্রযোজ্য হবে। তার সাথে নিজের পিতার মত বা মাহরামদের মত আচরণবিধি করা যাবে না। বরং একজন গায়রে মাহরামের সাথে যা যা নাজায়েজ ও হারাম অনুরুপ বিবাহের উকিলের সাথেও তা তা নাজায়েজ ও হারাম হবেই। অথচ বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় আমাদের সমাজে এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন সহ এটাকে গুনাহের কাজ হিসেবে মনেই করা হয় না। যার ফলাফল রুপে আমরা আমাদের সমাজে নানাবিধ অঘটন ঘটছে প্রতিনিয়তই।

এজন্যই কোন কনে পক্ষ থেকে বেগানা (যাকে বিয়ে করা হালাল) কোন পুরুষকে তার বিবাহের উকিল বানানোই জায়েজ নয়। বরং তার চাইতে সর্বউত্তম হবে বিবাহের জন্য আপন পিতা, ভাই, চাচা প্রমুখ কোন মাহরাম (যার সাথে বিবাহ হারাম) পুরুষকে উকিল বানানো। এতে করে পর্দাপুশিদা সহ শরীয়তের যাবতীয় হুকুম যে রুপ রক্ষা হবে। তেমনিভাবে উকিলকে ‘উকিল বাপ’ বলে সম্বোধন সহ যাবতীয় নাজায়েজ ও হারাম কার্যাবলী থেকে বিরত থাকার সম্ভাবনাও বেশী থাকবে।

এছাড়াও উল্লেখ্য যে, বিবাহের সময় কেন কনের পক্ষ থেকে কোন উকিল বানানো হলে, বিবাহ সম্পন্ন হবার সাথে সাথেই তার কাজ শেষ হয়ে যায়। বিবাহের পর তার সেই উকিলত্বের আর কোনই প্রায়জনই অবশিষ্ট থাকেই না। তাই পরবর্তীকালে তাকে বিশেষত দাওয়াত খাওয়ানো বা কনেকে তার নাইওর নেয়া সহ যাবতীয় সামাজে প্রচলিত কু-প্রথা সমূহ পালন করার কোন প্রশ্নই আসে না। সুতরাং এ বিষয় সংক্রান্ত যেসব প্রথাগত কার্যবিধি যা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, সেসবই কুসংস্কার ও সরাসরি ইসলামী শরীয়ত বিরুদ্ধাচরণের সামিল এবং মারাত্মকভাবে গর্হিতপূর্ণ কাজ। এসকল কার্যকলাপ বর্জণ সহ এসব থেকে মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে বাঁচার তৌফিক দান করুণ। (আমীন)

(মাসায়েলের সূত্রাদি:

সূরা নূর, ৩০:৩১/ তাফসীরে মাযহারী, ৬: ৪৯০/ ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, ৫:৩২৭)

লেখক: সাংবাদিক ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষক।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে