2442_ibn-sina

বিডি নীয়ালা নিউজ(১১ই মার্চ১৬)-ইসলামিক প্রতিবেদনঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসামান্য অবদান রাখায় নোবেল কমিটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসক, যারা গবেষণায় অবদান রেখেছেন, তাদের নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করছে। মুসলিম বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানে একাধিক ব্যক্তিত্ব অবদান রাখলেও নোবেল কমিটি তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। কারণ, এই চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মুসলমান।

সর্বকালের সর্বসেরা চিকিৎসাবিজ্ঞানী হিসেবে যিনি বিশ্ববাসীর কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন, তিনি হচ্ছেন ইবনে সিনা। পৃথিবীতে মুসলিম দেশগুলোতে ইবনে সিনার নামে একাধিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ৯৮০ সালে উজবেকিস্তানের বুখারা নগরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছোটকাল থেকেই তিনি পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখাতেন। কখনোই পড়াশোনায় ব্যর্থতার পরিচয় দেননি। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হওয়ার আগে ইলমে তাসাউফ ও ফিকাহ শাস্ত্রের ওপর ব্যাপক পড়াশোনা করেন। তার পাণ্ডিত্য চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি একাধিক দেশ ভ্রমণ করে জ্ঞানসাগরের চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছে যান। একাধিক পুস্তক রচনা করেন। তার বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানের
পুস্তকের নাম ‘কানুন-ফিল-ত্বিব’। এরপর তিনি একাধিক পুস্তক রচনা করেন, যেমনÑ কিতাব আল শিফা, কিতাব আল ইশারাত।
একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী চিকিৎসা নিয়ে থাকবেন, এটাই সবাই ভাববেন। কিন্তু ইবনে সিনা ছিলেন ব্যতিক্রম। একাধিক বিষয়ের ওপর তার সীমাহীন পাণ্ডিত্য ছিল। তাকে বলা হতো সময়ের সেরা দার্শনিক। তিনি সবার কাছে সবজান্তা মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। তার চিকিৎসাশাস্ত্রের পুস্তকগুলো প্রাচীন ইউরোপের একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়। পশ্চিমা দেশগুলোতে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের মহাগুরু হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার রচিত ‘আল কানুন-ফিল-ত্বিব্ব’

ibn-sina
পুস্তককে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মেডিক্যাল বাইবেল বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার ‘কিতাব আল শিফা’ পুস্তকটি যারা পাঠ করেছেন, তারা জানেন কিভাবে সুস্থতা অর্জন করা যাবে।
মহানবী সা: যিনি নিজে ছিলেন সর্বকালের সর্বসেরা মানুষ, একই সাথে সর্বকালের সেরা চিকিৎসক। আধ্যাত্মিক চিকিৎসা ছাড়াও শারীরিক চিকিৎসার বিধান তিনি বিশ্ববাসীকে জানিয়ে গেছেন। ইবনে সিনা মহানবীকে অনুকরণ করতে গিয়ে পরম করুণাময়ের কাছ থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সর্বোচ্চ কলাকৌশল অর্জন করেন। মহান আল্লাহর দাসত্ব কিভাবে করতে হবে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর কিভাবে অনুসরণ করতে হবে তাঁর বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা তিনি জানতেন এবং সবাইকে জানাতেন। তিনি পারলৌকিক জীবন সম্বন্ধে সর্বোচ্চ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি সুফিবাদের অনুসারী ছিলেন। ইবাদতের সর্বোচ্চ চূড়া তিনি স্পর্শ করেছেন। তাকে বলা হতো সেই যুগের সেরা আবিদ, জাহিদ ও আরিফ। বর্তমান যুগের ভণ্ড সুফিদের মতো তিনি সুফি ছিলেন না। তিনি হজরত আবুজর গিফারির মতো সুফি ছিলেন। একই সাথে সাহিত্যের চর্চাও করতেন। সেখানেও তিনি সাফল্য দেখিয়েছেন।
অসুস্থ শরীরকে সুস্থ করার যত রকম কলাকৌশল চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা আজ আবিষ্কার করছেন, এর শুরুটা করেছেন ইবনে সিনা। তার গবেষণা সাহিত্য অনুসরণ করে ইউরোপ-আমেরিকানেরা এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরা এখনো তেলপড়া, পানিপড়ার ওপর নির্ভরশীল থাকছি। এই মহাপুরুষ বিশ্ববাসীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসাশাস্ত্রের কলাকৌশল উপহার দিয়ে পবিত্র রমজান মাসের শুক্রবার ৪২৮ হিজরি সালে বা ১০৩৭ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের চিরশান্তির দরবারে চলে গেছেন।

লেখক : সৈয়দ রশিদ আলম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে