england

ডেস্ক রিপোর্টঃ প্রথমে ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস এবং পরে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীন ব্যাটিং-এর কারণে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে জয় উপহার দিলো বাংলাদেশ। নিশ্চিত জয়ের পথেই হাটতে থাকা বাংলাদেশ ম্যাচ হারলো ২১ রানে। ইনিংসের শেষ দিকে হাতে ৫২ বলে ৩৯ রান দরকার ছিলো বাংলাদেশের। হাতে উইকেট ছিলো ৫টি। কিন্তু শেষের দিকে এসে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশকে নিশ্চিত জয় থেকে বঞ্চিত করেন সেঞ্চুরিয়ান ইমরুল কায়েস ও হাফ-সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসানসহ লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানরা।
তাই ম্যাচ শেষে ফিল্ডারদের ক্যাচ মিস ও শেষের দিকে বাজে ব্যাটিং-কেই দুষলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, ‘আমাদের হাতেই ম্যাচটি ছিলো। কিন্তু শেষদিকে এসে আর হলো না। ৩০৯ সবসময়ই কঠিন। ইমরুল দারুণ ব্যাট করেছে। প্রস্তুতিমূলক ম্যাচের পর এবারও সেঞ্চুরি করলো ইমরুল। ফিল্ডাদের ক্যাচ মিসের কারণে প্রতিপক্ষ বড় স্কোর করেছে। নয়তো ২৮০ রানেই তাদের আটকে দেয়া সম্ভব ছিল।’
জয়ের জন্য ৩১০ রান টার্গেট বাংলাদেশের সামনে। টার্গেট দেখেই বুঝা যাচ্ছে, পাহাড় সমান। সেই টার্গেটে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৬ রানের এনে দেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। রান তোলায় ব্যস্ত ছিলেন ইমরুল। প্রস্ততিমূলক ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ইমরুল শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ৩১ বলে ১৭ রান করে তামিম ফিরে গিলে, প্রথম ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।
এরপর সাব্বিরকে নিয়ে জুটি বাঁধেন ইমরুল। এই জুটিও রানের চাকা সচল রেখেছিলেন। সাব্বির ছিলেন মারুমুখী। তবে ৩টি বাউন্ডারি সহায়তায় ১১ বলে ১৮ রান করে ফিরতে হয় সাব্বির। তাতে কিছুটা চাপে পড়েন যান ইমরুল।
কিন্তু ইমরুলকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করেছিলেন চার নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাতে ৫০ বলে ৫০ রান পায় বাংলাদেশ। তাই এই জুটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু উইকেটে জমে যাওয়া মাহমুদুল্লাহ ভক্তদের হতাশ করেন। ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ২৬ বলে ২৫ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
মাহমুদুল্লাহ’র মত একই শট খেলে আউট হন পাঁচ নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিম। ১২ বলে ১২ রান করেন মুশি। এতে ২৬.১ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫৩ রানে পরিণত হয় বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশের সামনে জয় ফিকে হয়ে যায়।
কিন্তু পঞ্চম উইকেটে দারুন এক জুটি গড়েন ইমরুল ও সাকিব। ইংল্যান্ডের বোলারদের মাথা গরম করে দিয়েছেন দু’জনে। উইকেটের চারপাশে রানের ফুলঝুড়ি ফুটিয়েছেন সাকিব। অন্যপ্রান্ত দিয়ে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ইমরুল। এতে এলোমেলো হয়ে পড়ে ইংল্যান্ডের বোলিং পরিকল্পনা। ফলে নিশ্চিত জয় দেখতে পাচ্ছিলো বাংলাদেশ।
কারণ ইমরুলের সেঞ্চুরি ও সাকিবের হাফ-সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের স্কোর পৌঁছে যায় ৪১ দশমিক ২ ওভারে ২৭১ রানে। জয় থেকে ৩৯ রান দূরে টাইগাররা। তখনও বল বাকী ছিলো ৫২টি। হাতে উইকেট ৫টি।
কিন্তু এই অবস্থা থেকে ম্যাচ হেরে বসলো বাংলাদেশ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া সাকিব ফিরেন দলীয় ২৭১ রানে। ৫৫ বলে ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭৯ রান করেন সাকিব।
সাকিবকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে খেলায় ফেরান জ্যাক বল। তবে তখনও জয় নিয়ে ভাবেনি ইংলিশরা। কিন্তু পরের বলেই সাত নম্বরে নামা মোসাদ্দেক হোসেনকে বিদায় করে হ্যাটট্টিকের সম্ভাবনা তৈরি করেন বল। তাতে জয় নিয়ে ভাবতে শুরু করে দেয় সফরকারীরা। সেই ভাবনাকে আরও রসদ যোগান স্পিনার আদিল রশিদ। মাশরাফি ও সেঞ্চুরিয়ান ইমরুলের উইকেট তুলে নিয়ে।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাওয়া ইমরুল ১১৯ বলে ১১২ রান করে থামেন। তার ২১২ মিনিটের ইনিংসে ১১টি চার ও ২টি ছক্কা ছিলো। আর মাশরাফি করেন ১ রান। এরপর শফিউলকে রান আউট ও শেষ ব্যাটসম্যান তাসকিনকে বিদায় দিয়ে ইংল্যান্ডকে দারুন এক জয় এনে দেন বল। সেই সাথে ম্যাচে নিজের ৫ উইকেটও পূর্ণ করেন বল। আর ১৩ বল বাকী থাকতেই ২৮৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। একই ভেন্যুতে আগামী ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ।
এর আগে, মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতেই প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জশ বাটলার। শুরুতে দেখে শুনে খেললেও, ধীরে ধীরে মারমুখি হতে থাকেন ইংলিশদের দুই ওপেনার জেসন রয় ও জেমস ভিন্স। ৭ ওভার শেষে ৪১ রানও তুলে ফেলেন তারা। তবে অস্টম ওভারের দ্বিতীয় বলে ভিন্সকে শিকার বানিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার শফিউল ইসলাম। ২০ বলে ১৬ রান করেন ভিন্স।
তবে ঐ সময় বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ ছিলেন আরেক ওপেনার জেসন রয়। মারমুখী মেজাজেই ছিলেন তিনি। বলের সাথে পাল্লা দিয়েই রান তুলেছিলেন রয়। কিন্তু মুখোমুখি হওয়া নিজের ৪০তম বলে আউট হন রয়। স্পিনার সাকিব আল হাসানকে ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে লং-অফে সাব্বির রহমানের তালুবন্দি হন রয়। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪১ রান করেন তিনি।
রয়ের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন জনি বেয়ারস্টো। রানের খাতা খোলার আগেই বেয়ারস্টোকে প্যাভিলিয়নে ফেরান সাব্বির। বোলার হিসেবে নয়, ফিল্ডার হিসেবে দুর্দান্ত এক সরাসরি থ্রোতে বেয়ারস্টোকে রান আউট করেন সাব্বির। ফলে ১২ দশমিক ৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৩ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড।
এই ১২ ওভারে শুধুমাত্র বোলিং দিয়েই নয়, ফিল্ডিং-এও বাংলাদেশ ছিলো দুর্দান্ত। বিশেষভাবে সাব্বির ও বাংলাদেশ দলনেতা মাশরাফি। দারুণ কিছু ফিল্ডিং-এ ইংল্যান্ডের বেশ কিছু রানও আটকে দিয়েছেন সাব্বির ও মাশরাফি। কিন্তু পরের দিকে যে এই ফিল্ডিং-ই কাল হবে বাংলাদেশের, তা কিন্তু কেউই ভাবেনি।
তৃতীয় উইকেট পতনের পর চতুর্থ উইকেটে জুটি বাঁেধন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা বেন ডাকেট ও বেন স্টোকস। দ্রুত উইকেটের সাথে মানিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন তারা। ফলে ২৮তম ওভারের প্রথম বলেই দেড়শ পেরিয়ে যায় ইংল্যান্ড।
তাই বাংলাদেশকে খেলার ফেরানোর জন্য দু’প্রান্ত দিয়ে বোলিং আক্রমনে বেশক’টি পরিবর্তনও আনেন মাশরাফি। সেই পরিবর্তন কাজও দেয়। কিন্তু ফিল্ডারদের সহজ ভুলে হতাশায় ডুব দেয় বাংলাদেশ।
৩০তম ওভারে বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদের দ্বিতীয় বলে মিড-অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন স্টোকস। কিন্তু সেই ক্যাচ ফেলে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তখন স্টোকস ৬৯ রানে দাঁড়িয়ে।
পরের ওভারে মাশরাফির বলে আবারো ক্যাচ দেন স্টোকস। কিন্তু ডিপ কভারে সেই ক্যাচ ফেলেন মোশাররফ রুবেল। এখানেই থেমে থাকেনি বাংলাদেশ ফিল্ডারদের ক্যাচ মিসের মহড়া। এরপর ব্যক্তিগত ৫৯ রানে থাকা ডাকেটের ক্যাচ ফেলেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।
এরই মাঝে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন স্টোকস। ৯৮ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন স্টোকস। তবে ১০১ রানেই থেমে যেতে হয় তাকে। মাশরাফির প্রথম শিকার হন স্টোকস। ৮টি চার ও ৪টি ছক্কা মারেন তিনি।
স্টোকসের আগে প্যাভিলিয়নে ফিরেন ডাকেট। ৬টি চারের সহায়তায় ৭৮ বলে ৬০ রান করেন তিনি। চতুর্থ উইকেটে স্টোকসের সাথে ১৫৯ বলে ১৫৩ রান যোগ করেন ডাকেট।
ডাকেট ও স্টোকসের পর ইংল্যান্ডের ইনিংসকে ৮ উইকেটে ৩০৯ রানে পৌছে দিয়েছেন অধিনায়ক বাটলার। ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৩ রান করেছেন বাটলার। এছাড়া ক্রিস ওয়াকস ১৫ বলে ১৬ রান করেন। ইনিংসের শেষদিকেও নিজেদের ব্যর্থতা প্রদর্শন করেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। বাংলাদেশের মাশরাফি, শফিউল ও সাকিব ২টি করে উইকেট নেন।
স্কোরকার্ড :
ইংল্যান্ড ইনিংস :
জেমস ভিন্স ক মাশরাফি ব শফিউল ইসলাম ১৬
জেসন রয় ক সাব্বির ব সাকিব ৪১
বেন ডাকেট ব শফিউল ইসলাম ৬০
জনি বেয়ারস্টো রান আউট(সাব্বির রহমান) ০
বেন স্টোকস কট সাব্বির ব মাশরাফি ১০১
জস বাটলার ক মোসাদ্দেক ব সাকিব ৬৩
মঈন আলী ক তামিম ব মাশরাফি ৬
ক্রিস ওকস রান আউট(সাকিব) ১৬
ডেভিড উইলি অপরাজিত ০
অতিরিক্ত( বা-১, লেবা-৩, ও-২) ৬
মোট (৫০ ওভার, ৮ উইকেট) ৩০৯ রান
উইকেট পতন: ১/৪১,২/৬১, ৩/৬৩, ২১৬/৪, ৫/২৩০, ৬/২৪৫, ৭/৩০৮, ৮/ ৩০৮।
বাংলাদেশ বোলিং:
মাশরাফি ১০-০-৫২-২(ও-১),
শফিউল ইসলাম ৯-০-৫৯-২,
সাকিব আল হাসান ১০-০-৫৯-২,
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৯-০-৫০-০,
মাহমুদুল্লাহ ৩-০-২৪-০,
মোশারফ হোসেন রুবেল ৩-০-২৩-০,
তাসকিন ৬-০-৩৯-০(ও-১)।
বাংলাদেশ ইনিংস:
তামিম ইকবাল ক ভিন্স ব বল ১৭
ইমরুল কায়েস স্টাম্পড বাটলার ব আদিল রশিদ ১১২
সাব্বির রহমান ক উইলি ব বল ১৮
মাহমুদুল্লাহ ক বদলী(বিলিংস) ব আদিল রশিদ ২৫
মুশফিক ক বদলী(বিলিংস) ব আদিল রশিদ ১২
সাকিব ক উইলি ব বল ৭৯
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ব বল ০
মাশরাফি ক বাটলার ব আদিল রশিদ ১
মোশাররফ হোসেন রুবেল অপরাজিত ৭
শফিউল ইসলাম রান আউট(রশিদ) ০
তাসকিন ক বাটলার ব বল ১
অতিরিক্ত(বা-১,লেবা-৪, নোব-১, ও-১০) ১৬
মোট-(৪৭.৫ ওভার, অলআউট) ২৮৮ রান
উইকেট পতন: ১/৪৬, ২/৮২,৩/১৩২, ৪/১৫৩, ৫/ ২৭১, ৬/২৭১, ৭/২৭৪, ৮/ ২৮০, ৯/২৮০, ১০/২৮৮
বোলিং:
ক্রিস ওকস ৭-১-৩৮-০(ও-১),
ডেভিড উইলি ৭-১-৪৬-০(নো-১, ও-১),
জ্যাক বল ৯.৫-০-৫১-৫(নোব-১, ও-৪),
বেন স্টোকস ৫-০-৩৭-০(ও-১),
আদিল রশিদ ৯-০-৪৯-৪(ও-৩),
মঈন আলী ১০-০-৬২-০।
ফল: ইংল্যান্ড ২১ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: জ্যাক বল (ইংল্যান্ড)।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে