erthquek

বিডি নীয়ালা নিউজ(২৫ই  আগস্ট ২০১৬ইং)-ডেস্ক রিপোর্টঃ  ৪ জানুয়ারি, ২০১৬। শীতের ভোরটা ছিল শান্ত। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল সারা দেশের বেশির ভাগ মানুষ। হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি। সে কাঁপন লাগল গিয়ে বুকে। ভূমিকম্প! রিখটার স্কেলে ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশ। কাকভোর নিমেষেই যেন আতঙ্কের ঘোর। এই আতঙ্কেই প্রাণ যায় ছয়জনের।

গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে সারা দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৯। এতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ভবন হেলে পড়ে। হুড়োহুড়িতে আহত হন অন্তত ৩০ জন।  সর্বশেষ গতকাল বিকালে সারা দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেল অনুযায়ী উত্পত্তিস্থলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৮। এর ৩২ ঘণ্টা আগে দেশে ৫ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়।  জানা গেছে, চলতি ৮ মাসেই সারা দেশে এমন ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে ১৪ বার। গত বছর ৩০ বারেরও বেশি। বিগত ১৫ বছরে সাড়ে ৫০০ বারের বেশি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে বাংলাদেশে। প্রতিটি ঘটনাতেই মানুষ নিজ নিজ বাসা-ভবন থেকে বেরিয়ে যান। চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘন ঘন এমন ভূকম্পনে সারা দেশের মানুষের মধ্যে এখন আতঙ্ক। ইট-পাথরের রাজধানীর মানুষের মধ্যে আতঙ্কটা একটু বেশিই। এই শহরের ভবনগুলোর অবস্থা কম-বেশি সবারই জানা। ভূমিকম্প ধ্বংসাত্মক হলে শহরের পরিস্থিতি কী হবে- তা অনুমান করে অনেকেরই শরীরে কাঁটা দেয়! তাই ভূমিকম্প টের পাওয়া মাত্রই সবাই নিজ নিজ ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে থাকেন। ভূমিকম্পের সময় উদ্বিগ্ন মানুষ মুঠোফোনে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী এবং পরিচিতজনদের খোঁজখবর নিতে থাকেন। ভূমিকম্পের সময় অনেকে আল্লাহকে ডাকেন।  দোয়া-দরুদ পড়ে তারা রহমত কামনা করেন। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে পশুপাখি পর্যন্ত চিৎকার করে। অনেক জায়গায় পুকুর, খাল-বিল ও নদীর পানিতে ব্যাপক আলোড়ন দেখা যায়। পুকুর ও নদীতে বড় বড় ঢেউ খেলে যায়। গতকাল বিকালেও পুনরাবৃত্তি ঘটেছে একই ঘটনার। যে যেভাবে পেরেছে ভবন থেকে বেরিয়ে রাস্তা, মাঠ বা খোলা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ভূমিকম্প আতঙ্কে সারা দেশের চিত্র ছিল অভিন্ন। ঘন ঘন এমন ভূকম্পনে ভূতত্ত্ববিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন, দেশের অভ্যন্তরে কিংবা কাছাকাছি কোনো উত্পত্তিস্থল থেকে মাঝারি, মাঝারি-উঁচু কিংবা তীব্র মাত্রায় ভূমিকম্প আঘাত হানার আশঙ্কা জোরালো হয়ে উঠছে। যদি তাই ঘটে, সেক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, কুমিলা, ময়মনসিংহ, উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিরাট অংশজুড়ে ত্রুটিপূর্ণ ও অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হাজার হাজার ভবন ভূমিসাৎ হয়ে যেতে পারে। এতে করে মৃত্যুর মিছিল ও সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে অকল্পনীয়। সে ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার স্বপ্ন পরিণত হবে দুঃস্বপ্নে। আর এসবের কারণে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের মাত্রাটা একটু বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এবং ইউএনডিপির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, ২০০৯ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মধ্যে ভবনগুলো নিয়ে জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, আগামীতে যদি ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয় তাহলে তিন লাখ ২৬ হাজার ভবনের মধ্যে ৭২ হাজার ভবন তাত্ক্ষণিক ধসে পড়বে। একেবারে অক্ষত থাকবে খুব কম সংখ্যক ভবন। এ ছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে বিস্ফোরণ ঘটে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। ঘটবে মানবিক বিপর্যয়ও। আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্থ-অবজারভেটরির যৌথ গবেষণায় বলা হয়, ভারতীয়, ইউরেশীয় এবং বার্মার গতিশীল ভূ-পাটাতনের (টেকটোনিক পেট) সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এখানে বাংলাদেশ অঞ্চলে দুদিক থেকেই শক্তিশালী ভূমিকম্পের উপযোগী শক্তি ভূস্তরে অনবরত জমা হয়েছে। এতে করে দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কার মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশ। এর মাত্রা হতে পারে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ পর্যন্ত। তা ছাড়া বাংলাদেশের ভিতরে ও কিনারের দিকে ১৩টি ভূ-ফাটল (ফল্ট) লাইন রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূমিকম্প জোন বা বলয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ : রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টা ৩৪ মিনিটে ৫৪ সেকেন্ডের এ কম্পন অনুভূত হয়। মিয়ানমারে উত্পত্তিস্থলে এর মাত্রা ছিল ৬.৮। এর প্রভাবে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ কম্পন অনুভূত হয়।  আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মুস্তাফিজার রহমান জানান, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৮। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থল ছিল মিয়ানমারের চাউক। ঢাকা থেকে এটির উত্পত্তিস্থলের দূরত্ব ৩৩২ কিলোমিটার। কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠের ৮৪ কিলোমিটার গভীরে। আতঙ্কিত মানুষ মুহূর্তেই দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। বাসা-বাড়ি, অফিস থেকে তাড়াহুড়া করে বেরোতে থাকে মানুষ। আশ্রয় নেয় নিরাপদ স্থানে। আতঙ্কিত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। অনেকে ভবনের ছাদে অবস্থান নেয়। এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৮টা ১১ মিনিটেও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৫। ভূমিকম্পের উত্পত্তিস্থল মিয়ানমারে। ঢাকার আগারগাঁওয়ের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে উত্পত্তিস্থলের দূরত্ব ৪০৯ কিলোমিটার পূর্বে। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা-ইউএসজিএস জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩।

 

 

 

 

bp-protidin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে