বিডি নীয়ালা নিউজ ( ২১ই জুলাই ২০১৬ইং)-ডেস্ক রিপোর্টঃ অবশেষে জামিন পেলেন দেশের বৃহত্তম মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কম্পানি ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন ও একই কম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ অর্থপাচারের দায়ে মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা দুই মামলায় এ দুজনের জামিন মঞ্জুর করেন।
এই দুজনসহ চার শীর্ষ কর্মকর্তা সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে কারাগারে রয়েছেন। তাঁরা কারারুদ্ধ থাকায় চরম হতাশায় ভুগছে কম্পানিটির ৪৫ লাখ পরিবেশক ও গ্রাহকের পরিবার-পরিজন। গত সাড়ে তিন বছরে নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে বারবার তাঁদের জামিন নামঞ্জুর হয়। পরে হাইকোর্টে আবারও আবেদন জানানো হলে গতকাল তার শুনানি হয়। শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, মামলার বিচার কবে শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সাড়ে তিন বছর যাবৎ তাঁরা কারাগারে রয়েছেন। পরে আদালত উভয়কে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে জামিন দেন। নিম্ন আদালতে তাঁদের পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। দুটি মামলাই ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আজমালুল হক কিউসি। দুদকের পক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘দুই মামলায় দুজনকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে যাব।’ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নজিবুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় দুই আসামিকে জামিন দিয়েছেন আদালত। তবে তাঁদের পাসপোর্ট জমা দিতে হবে।
২০১৪ সালের ৪ মে মামলা দুটিতে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। চার্জশিটে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রফিকুল আমীনসহ ৫১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তাঁদের মধ্যে ৪৬ জন পলাতক। প্রায় চার হাজার ১১৯ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয় দুই মামলায়। চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সোসাইটির বোর্ড সভায় অনুমতি না নিয়ে সদস্যদের অগোচরে প্রলোভন দেখিয়ে এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি (ডিএমসিএস) লিমিটেড এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেড (ডিটিপিএল) গ্রুপের পরিচালকরা বিভিন্ন প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ডেসটিনির পরিচালকরা ওই অর্থ ৩২টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন, যা আইন পরিপন্থী।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে রাজধানীর কলাবাগান থানায় করা একটি মামলায় ১২ জনকে আসামি করা হয়। তদন্তে আরো সাতজনের নাম আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। এ মামলায় অভিযোগ করা হয়, দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকা পাচার করা হয়েছে।
একই দিনে রাজধানীর কলাবাগান থানায় করা দ্বিতীয় মামলায় ২২ জনকে আসামি করা হয়। পরে তদন্তে আরো ২৪ জনের নাম আসামির তালিকায় যুক্ত করে মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। এ মামলায় এক হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৫ টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।